মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে পরোয়ানাটি কারাগারে পৌঁছায়।
ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে ১৫ মিনিট পর বের হয়ে এলেও বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি।
তবে সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা তাঁরা বুঝে পেয়েছেন। এর পর আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কারাগারের পাশেই কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর অফিসে যান জেল সুপার নেসার আহমেদ ও সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
বেলা ১টার দিকে ট্রাইব্যুনালের ডেসপাস রাইডার সিরাজুল ইসলামসহ তিন-চারজন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ পাহারায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে রওনা হন ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার। লাল কাপড়ে মোড়ানো পরোয়ানাটি সিরাজুল ইসলামের হাতে ধরা ছিল।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক।
গতকাল বুধবার কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ও বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ এ রায় দেন। গতকাল রাতেই পূর্ণাঙ্গ রায়টি আপিল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। এর পর আজ মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হলো।
২০১৩ সালের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আর গত বছরের ৩ নভেম্বর বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতামতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর পর রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা। অবশেষে কাদের মোল্লার রিভিউর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ জটিলতার অবসান হয়। অর্থাৎ আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করার সুযোগ পাবেন কামারুজ্জামান। এর সাড়ে তিন মাসের মাথায় গতকাল প্রকাশ পায় কামারুজ্জামানের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ২০১০ সালের ২ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে।