ভুল সেটের প্রশ্নে এইচএসসির আইসিটি পরীক্ষা!
গাজীপুর শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ কেন্দ্রে সোমবার এইচএসসির আইসিটি বিষয়ে ভুল সেটে বহুনির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবাদে দুপুরে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাসুদ চৌধুরী জানান, জেলা শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ কেন্দ্রে পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ওই কেন্দ্রে সাড়ে ১২ শতাধিক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর আইসিটি বিষয়ের বহুনির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া হয় ভুল সেটের প্রশ্নপত্র দিয়ে। বোর্ড থেকে ওই বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বহুনির্বাচনী অভীক্ষা-১ (এমসিকিউ-১) এবং বহুনির্বাচনী অভীক্ষা-২ (এমসিকিউ-২) সেট প্রশ্ন পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরুর আগে সোমবার সকালে বোর্ড থেকে ওই বিষয়ের বহুনির্বাচনী অভীক্ষা-২ সেটে পরীক্ষা না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। কিন্তু কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ কেন্দ্রে ওই নির্দেশনা না মেনে বহুনির্বাচনী অভীক্ষা-২ নম্বর সেটেই সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে পরীক্ষা শেষে দুপুরে উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের জানান, এতে শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য বোর্ড অফিসকে অবগত করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
পরীক্ষার্থী ফারহানা বন্যা বলেন, আমরা বহুনির্বাচনী অভীক্ষা-২ সেটে পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা শেষে বাইরে বেরিয়ে অন্য কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে ওই ভুল সেটে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারি। পরে আমরা অভিভাবকদের ও জেলা প্রশাসককে জানাই।
স্থানীয় বরুদা এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. সামশুল আলম জানান, এ ভুলের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি ও বিচার চাই। তা না হলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, প্রশ্নপত্র নির্ধারণ করে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বোর্ডের পাঠানো ম্যাসেজটি সঠিকভাবে না বুঝে ওই কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা গোলাম মোরশেদ মৃধা পরীক্ষার্থীদের মাঝে নির্ধারিত প্রশ্নপত্রের সেট বিতরণ না করে অন্য সেট বিতরণ করেন। ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করায় দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার কারণে কেন্দ্রের ওই ট্যাগ কর্মকর্তাকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্থলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ওবায়দা আলীকে ট্যাগ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাজীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্যের মধ্যে একজন হলেন গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা এবং অপরজন হলেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড অফিসকেও অবগত করা হয়েছে।