৫৭ ধারা নিয়ে এক রিট খারিজ, অন্যটির শুনানি শুরু
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্তি চেয়ে পৃথক দুটি রিটের মধ্যে একটি অপরিপক্ব আবেদন হিসেবে খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। অপর একটি আবেদনের আংশিক শুনানি শেষে আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। আজ রোববার বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দের রিট আবেদন খারিজ করেছেন।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘৫৭ ধারা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচন চলছে। সরকার নিজেই যেখানে সংশোধনের কথা চিন্তা করছে, সেখানে রিট করার কোনো মেরিট নেই। তাই আদালত অপরিপক্ব আবেদন হিসেবে খারিজ করে দিয়েছেন।’
অপরদেক বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ৫৭ ধারা বাতিল চেয়ে আরো একটি আবেদন করা হয়। এই আবেদনের পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনিরের রিটের শুনানি শুরু হয়েছে। আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপক্ষে অমিত তালুকদার শুনানিতে অংশ নেন।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট সকালেই তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারা বাতিল চেয়ে চার সচিবকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ২৭ আগস্ট তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইনসচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসচিব এবং তথ্যসচিবকে পাঠানো ওই নোটিশে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরে গত ২৭ আগস্ট জনৈক জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তির পক্ষে আরো একটি রিট দায়ের করেন আইনজীবী শিশির মনির। রিটে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রিটকারী অ্যাডভোকেট শিশির মনির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মাধ্যমে আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এ আইনটিকে বাতিল করার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেছি। আজ আমরা শুনানি করেছি, আগামীকাল রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে শুনানি করবেন।’
একই দিন দেশের ১১ জন বিশিষ্ট নাগরিক এ আইন বাতিল চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ১১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান।
আইনসচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে নোটিশের জবাব দিতে ব্যর্থ হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে সতর্ক করা হয়েছে।
নোটিশদাতা ১১ জন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কামাল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন ও ফাহমিদুল হক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞানের সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, ঢাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সংস্কৃতিকর্মী অরূপ রাহী ও লেখক রাখাল রাহা।
নোটিশে বলা হয়, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অঙ্গীকারের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক।
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং অন্যূন সাত বছর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। ’