খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামে বিশাল বাণিজ্যিক এলাকায়। এ জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছেন খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও আসাদগঞ্জের ব্যাবসায়ীরা। তাঁদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গুদামে পানি ওঠায় অনেক খাদ্যদ্রব্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকা।
urgentPhoto
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খাল-নালা পরিষ্কার না করায় কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের এসব সড়কে থাকার কথা নিত্যপণ্যবাহী যানবাহন। সেখানে সাগর থেকে জোয়ারের পানি এসে তলিয়ে গেছে পাইকারি বাজারের অধিকাংশ অলিগলি। জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে অধিকাংশ খাদ্যগুদামে। ফলে নষ্ট হচ্ছে মালামাল। আর এমন চিত্র এখন নিত্যঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। শুধু দিনে নয়, গভীর রাতেও পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জসহ আশপাশের সব বাজারে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে। তাতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
চাল ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, এখানে যাঁদের খাদ্যদ্রব্যের দোকান বা গুদাম রয়েছে, তাঁদের শত শত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। কর্ণফুলী নদী ও চাক্তাই, বদরখালে ড্রেজিং ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুর রহিম বলেন, তিন দিন ধরে পানি বাড়ছে। গতকাল যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়, আজ ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও আবার খরিদ্দার পাওয়া যাচ্ছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে জোয়ারের পানি ও জলাবদ্ধতা ঠেকানো যাচ্ছে না। এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, জোয়ারের পানি কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করত না। এখন প্রবেশ করছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এতে নদ-নদী উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। কর্ণফুলী নদী, চাক্তাই খালসহ আশপাশের নদীগুলোর ড্রেজিং ব্যবস্থা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে নাব্যতাও কমে গেছে। এ কারণে যখন জোয়ার আসে, তখন পানি নদী থেকে উপচে ড্রেনগুলো দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এ কারণে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিষ্কার না করার কারণে এবং পাহাড়ের পলি এসে পানি চলাচলের এসব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সগির আহম্মদ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ছয় থেকে সাত ইঞ্চি পানি বাড়ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত যদি পানি বাড়তে থাকে এবং প্রতিবছর যদি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে খাতুনগঞ্জের মতো অতি প্রাচীন বাণিজ্যনগরী ধ্বংস হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশের অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে যাবে। এ জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সহসভাপতি মাহাবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই মাসে ৮ থেকে ১০ বার পানি উঠেছে। শুধু জোয়ারের পানি নয়, চাক্তাই খালের পানি উপচে যেকোনো সময় গুদাম, বাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উঠছে। পাঁচ ঘণ্টা পর তা আবার নেমে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই পানি উঠছে। খাদ্যদ্রব্যসহ মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাতুনগঞ্জ থেকে রাজস্ব বেশি যায়, সেই জায়গাটা যদি অবহেলিত হয়, তাহলে কিন্তু সেটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। কর্ণফুলীতে ড্রেজিং করতে হবে। চাক্তাইসহ অন্যান্য খালকে দখলে এনে সংস্কার করে গভীরতা বাড়াতে হবে।’
জোয়ারের পানি ও নগরীর জলাবদ্ধতা ঠেকাতে নিয়মিত কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং, চাক্তাই ও বদর খাল খনন, কর্ণফুলী নদীর মোহনায় স্লুইসগেট স্থাপন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার ও সংস্কারের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।