ঐশীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় এই দম্পতির সন্তান ঐশী রহমানকে হাইকোর্টের দেওয়া যাবজ্জীবন দণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার আপিল দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট-অন-রেকর্ড সুফিয়া খাতুন।
বিচারিক আদালত ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন উল্লেখ করে সুফিয়া খাতুন বলেন, কিন্তু হাইকোর্ট যাবজ্জীবন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল করা হয়েছে। আপিলে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। কবে আপিল করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে করা হয়েছে। তবে আজকে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এদিকে, ঐশী রহমানের খালাস চেয়ে আপিল করেছেন তার আইনজীবী আফজাল এইচ খান। গত মাসেই এ আবেদন করা হয়েছে দাবি করে এনটিভি অনলাইনকে আফজাল এইচ খান বলেন, ‘হাইকোর্ট ঐশী রহমানের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দিয়েছিলো, আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আপিলে তার খালাস আবেদন করেছি। শুনানি হতে আরো দুই বছর সময় লাগতে পারে।’
গত বছরের ৫ জুন ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ড সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজার দণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও নিজামুল হক নিজাম।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী আফজাল এইচ খান ও সুজিত চ্যাটার্জি। এরপর গত ৭ মে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।
এর আগে পুলিশ দম্পতি হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ঐশী। পরে ১২ মার্চ এই মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আদালত। পরে ৫ জুন রায় ঘোষণা করেন আদালত। গত ২২ অক্টোবর এই মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজ বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখা (রাজনৈতিক শাখা) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মা-বাবা খুন হওয়ার পর পালিয়ে যান ঐশী। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একই দিন ঐশী রহমান রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আবুল খায়ের মাতুব্বর আসামিদের বিরুদ্ধে দুটি পৃর্থক অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
সুমি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর আইনে এবং ঐশীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অরেকটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সুমির মামলার বিচার কার্যক্রম কিশোর আদালতে পরিচালনা হচ্ছে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধান আসামি ঐশী রহমানকে ডাবল মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন আদালত। অপর দুই আসামি ঐশীর বন্ধু রনিকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও জনিকে খালাস দেওয়া হয়।