ঢাকায় গৃহকর্মীকে হত্যার অভিযোগ মা-বাবার

ঢাকায় মিরপুরে নিহত কিশোরী গৃহকর্মী তাহমিনার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের ছয়না গ্রামে তাহমিনার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আজ শুক্রবারও বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশীরা। তাহমিনার মা হালিমা খাতুনের বুকফাটা আর্তনাদ ও অবিরাম কান্নায় এখন শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে সেখানে। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ।
urgentPhoto
মা হালিমা খাতুনের দাবি, তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। তাঁর শরীরের অনেক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।
একই কথা বলেন তাহমিনার বাবা জয়নাল আবেদিন। উপস্থিত সংবাদকর্মীসহ সবার কাছে তিনি বলেন, তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঢাকায় মিরপুর থানায় মেয়েকে হত্যার মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি।
দরিদ্র রিকশাচালক জয়নাল আবেদিনের ১৪ বছর বয়সী কিশোরী কন্যা তাহমিনা আক্তার মিরপুর এলাকায় অ্যাডভোকেট মামুন ওরফে মো. লিটন নামের এক আইনজীবীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। ছয়-সাত মাস আগে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে সে ঢাকার ওই বাসায় কাজে যোগ দেয়। অভাবের তাড়নায় পাশের গ্রামের এক নারীর মাধ্যমে তাকে ওই বাসায় দেওয়া হয়েছিল। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তাহমিনা ছিল দ্বিতীয়।
গত মঙ্গলবার মিরপুর মডেল থানা-২-এর উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম মেয়েটির বাবা রিকশাচালক জয়নাল আবেদিনকে ফোন করে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান।
তাহমিনার বাবার অভিযোগ, লাশ আনতে গৃহকর্তার বাসায় গেলে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। ওই পরিবারটির এখন পর্যন্ত কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ফোন করলেও ফোন কেটে দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার মিরপুর থানায় লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাহমিনার স্বজনরা লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি পৌঁছান। লাশ গ্রামে পৌঁছার পর আত্মীয়সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ভ্যানগাড়িতে লাশ নিয়ে হত্যার বিচার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিলসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রওনা দেন। তাহমিনার বাবা-মাসহ স্থানীয় কয়েকশ লোক মিছিলে অংশ নেন। এ ছাড়া মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি সুলতানা রাজিয়া, বৌলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন, সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম মিছিলে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
মিছিলকারীরা পরে জেলা প্রশাসক জি এস এম জাফর উল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক মন্তব্য করে এ ব্যাপারে সম্ভব সব ধরনের সহায়তা করার আশ্বাস দেন। পরে সন্ধ্যায় তাহমিনার দাফন সম্পন্ন হয়।