সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের ৩০০ গ্রামে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের প্রায় তিনশ গ্রামে আজ শুক্রবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। এই জেলাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, বরিশাল, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শেরপুর, পটুয়াখালী ও ঝিনাইদহ।
ঢাকার বাইরে আমাদের প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
শামসুল হক হায়দরী, চট্টগ্রাম : আজ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। চন্দনাইশ উপজেলার জাঁহাগীরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। এতে ইমামতি করেন দরবারের পীর সৈয়দ মোহাম্মদ আলী। তারা জানান, এই দরবারের অনুসারী দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১২০ গ্রামে আজ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল: বরিশালে আজ ঈদ উদযাপন করেন জাঁহাগীরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া মতাদর্শীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠি জাঁহাগীরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল আলিম। এ ছাড়া নগরীর আরো দুটি মসজিদসহ বিভাগের অর্ধশতাধিক মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বরিশাল বিভাগে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার ঈদুল ফিতরের উৎসব পালন করে আজ। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জাঁহাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের মতাদর্শী এসব মানুষ।
আব্দুল আজিজ শিশির, শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের সুরেশ্বর দরবার শরিফের ভক্ত ও মুরিদান ৩০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। সুরেশ্বর দরবার শরিফের পীর জানশরিফ মাওলানার আমল থেকে চন্দ্র মাসের গণনা অনুসারে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা রোজা ও ঈদ পালন করে আসছে।
সুরেশ্বর দরবার শরিফের গদিনসীন পীর শাহ নূরে কামাল ঈদুল ফিতর পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর দরবার শরিফের মাঠে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
হাবিবুর রহমান খান, চাঁদপুর: জেলার চার উপজেলার ৪০টি গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। হাজীগঞ্জ, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ঈদকে ঘিরে লোকজনের মধ্যে আনন্দ উৎসব দেখা গেছে।
আজ সকাল ১০টায় হাজীগঞ্জের সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন পীরজাদা আরিফ চৌধুরী।
এসব এলাকার লোকজন সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় শত বছর ধরে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছে।
কাকন রেজা, শেরপুর : শেরপুরের চারটি উপজেলার আটটি এলাকায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে আজ ঈদ উদযাপন করা হয়। নকলা উপজেলার চরকৈয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় সবচেয়ে বড় জামাতটি। চরকৈয়া গ্রামের একটি বিশেষ তরিকার অনুসারীরা তাদের নিজস্ব ঈদগাহ মাঠে সকাল ৮টায় নামাজ আদায় করেন। শতাধিক মুসল্লির এই ঈদ জামাতে বিশেষ পর্দা ব্যবস্থায় নারীরাও অংশগ্রহণ করেন।
জামাতের আয়োজনকারী ও ঈদগাহ মাঠের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক আগাম ঈদের জামাত সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের সাথে দিনের মিল রেখে দীর্ঘদিন ধরে রোজা ও ঈদের জামাতসহ অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রমগুলো পালন করে আসছি।’
এদিকে শুক্রবার সকালে জেলায় আরো সাতটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো-শেরপুর সদর উপজেলার উত্তর চরখারচর ও দক্ষিণ চরখারচর; নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া, গোবিন্দনগর ও ছয়আনিপাড়া এবং ঝিনাইগাতি উপজেলার বনগাঁও।
কাজল বরণ দাস, পটুয়াখালী : পটুয়াখালী সদর, বাউফল, গলাচিপা ও কলাপাড়ার ৩০টি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মুসলমান আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করেছেন। সকাল ৯টায় পটুয়াখালীর বদরপুর দরবার শরিফে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সৌদি আরবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৯২৮ সাল থেকে হানাফি মাজহাবের অনুসারী এখানকার প্রায় ৫০ হাজার মুসলমান একদিন আগে রোজা রাখা শুরু করেন। আবার একদিন আগেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে এরা চট্টগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া ও বদরপুর দরবার শরিফ এবং চানটুপির অনুসারী হিসাবে পরিচিত। এ তরিকার নিয়ম হচ্ছে যে, পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে সেদিন থেকেই রোজা রাখা উচিত এবং সেটাই করে আসছেন।
জেলার সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফসহ ৩০ গ্রামের মধ্যে রয়েছে গলাচিপার সেনের হাওলা, পশুরী বুনিয়া, নিজ হাওলা, কানকুনি পারা ও মৌডুবি, বাউফলের মদনপুরা, রাজনগর, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদি, চন্দ্রপাড়া, দ্বিপাশা, শাপলাখালী, কনকদিয়া, আমিরাবাদ, কলাপাড়ার নিশানবাড়িয়া, ইটবাড়ীয়া, শহরের নাঈয়াপট্টি, টিয়াখালী, তেগাছিয়া, দক্ষিণ দেবপুর।
সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার ১১টি ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চট্টগ্রামের হজরত ইয়াছিন মিয়ার অনুসারীরা যুগ যুগ ধরে এখানে ঈদের জামাত পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সস্রাইল দায়রা শরিফের সামনে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুাষ্ঠত হয়। ঈদের জামাতে এলাকায় হজরত ইয়াছিন মিয়ার অনুসারীরা অংশ নেয়। ঈদের জামাত পরিচালনা করেন খান মোখলেসুর রহমান। নামাজ শেষে এ পীরের অনুসারীরা কোলাকুলি করেন।
মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ১০ গ্রামের শতাধিক মুসলমান ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। আজ সকালে উপজেলা শহরের খেলার মাঠের কাছে এ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ইমামতি করেন স্থানীয় দখলপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম। সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে প্রতি বছর তারা ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন।
এম. আর. মুর্তজা, মাদারীপুর : মাদারীপুরের চারটি উপজেলার ৩০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আজ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। তারা সবাই সুরেশ্বর পীরের মুরিদ। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা এ ঈদ উদযাপন করে আসছেন।
জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও প্রধান ও বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর উপজেলার তাল্লুক গ্রামের চরকালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সকাল সাড়ে ৯টায় এ জামাত পড়ান ইমাম আব্দুল হাশেম ফকির। জামাত শেষে দেশের জনগণের জন্য দোয়া এবং একে অপরে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
সুরেশ্বর দায়রা শরিফের পীর খাজা শাহ্ সুফি সৈয়্যেদ নূরে আক্তার হোসাইন জানান, সৌদি আরবসহ মধ্যেপ্রাচ্যের ৬৯টি দেশে চাঁদ দেখা যাওয়ায় শুক্রবার এসব দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা, জাজিরা, মহিষেরচর, জাফরাবাদ, চরকালিকাপুর, তাল্লুক, বাহেরচর কাতলা, চরগোবিন্দপুর, আউলিয়াপুর, ছিলারচর, কুনিয়া, মস্তফাপুর, কালকিনির সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, আলীনগর, বাঁশগাড়ী, খাসেরহাট, আউলিয়াপুর, রামারপোল, ছবিপুর, ছিলিমপুর, ক্রোকিরচর, সিডিখান, কয়ারিয়া, রমজানপুর, বাটামারা, রাজারচর, শিবচরের কেরানীবাট, পাচ্চর, স্বর্ণকার পট্রিসহ জেলার চারটি উপজেলার ৩০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে।
মুরিদরা জানান, ইসলাম ধর্মের সব কিছুই মক্কা শরিফ হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সুরেশ্বর দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা শাহ্ সুরেশ্বরী (রহ.) এর অনুসারীরা ১৪৭ বছর আগে থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন করে আসছেন। তাই সুরেশ্বর দরবার শরিফের মুরিদরা বাংলাদেশের একদিন আগে থেকে রোজা রাখেন এবং একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।