এমপি হোস্টেলে ‘ভাইয়ের’ লোকদের দাপট
বহিরাগতদের দাপটে তটস্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের থাকার জন্য নির্মিত এমপি হোস্টেলের বাসিন্দারা। ‘ভাই’দের দোহাই দিয়ে এখানে চলে দোকান ভাড়া দেওয়া, যখন-তখন যে কারো প্রবেশ, আড্ডাবাজিসহ নানা অনিয়ম। তবে সেই ‘ভাই’ কে বা কারা সে সম্পর্কে মুখ খোলেননি কেউ।
বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ কমিটির সদস্যরা আজ সোমবার দুপুরে পরিদর্শন করেন এমপি হোস্টেল। এ সময় বেশ কিছু অনিয়মের ঘটনা ধরা পড়ে সংসদ কমিটির সদস্যদের কাছে ।
সংসদ কমিটির সপ্তম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ দুপুরে মানিকমিয়া এভিনিউয়ের এক থেকে ছয় নম্বর সংসদ সদস্য ভবন পরিদর্শন করেন কমিটির সদস্যরা। এ সময় এসব ফ্ল্যাটে বসবাসরত সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন তাঁরা।
সংসদ কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের নেত্বেত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটিতে ছিলেন বেগম সাগুফতা ইয়াসমিন, পঞ্চানন বিশ্বাস, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তালুকদার মো. ইউনুস ও নাজমুল হক প্রধান। এ ছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে হুইপ মো. শহীদুজ্জামান সরকার, মো. নূরুল ইসলাম ওমর, মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার ও উম্মে রাজিয়া কাজল পরিদর্শনে অংশ নেন।
বিভিন্ন অভিযোগ ও এর সত্যতা নিয়ে সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমপি হোস্টেলের সিঁড়ি ঘরে অবৈধভাবে লোকজন বসবাস করে। আমরা আজ তাদের দরজা ভেঙে বের করেছি এবং সাতদিনের মধ্যে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি বলেন, নারী এমপিদের ফ্ল্যাটের সামনেও লোকজন থাকে। যে যখন ইচ্ছে আসছে ও যাচ্ছে।
বাইরের লোকগুলো কারা জানতে চাইলে নাজমুল হক বলেন, ‘এরা নাকি বিভিন্ন ভাইদের নামে থাকে। তবে ভাইদের নাম বলে না। এখানে এসে আড্ডা দেয়। তবে যাই হোক কমিটিকে পরিদর্শন করে সাতদিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, ‘অনিয়ম দুর্নীতি তো আছেই। এ ছাড়া ক্ষমতাসীনদের অনেকেই আছে প্রভাবশালী এমপি, মন্ত্রীদের নাম ভাঙিয়ে এখানে ব্যবসা করে। দোকান দিয়েছে। আমাদের কাছে এক নারী বাসিন্দা জানিয়েছেন, যারা এখানে প্রভাব খাটায় তারা সবাই বলে আমাদের বড় ভাইয়ের লোক। কিন্তু সেই বড় ভাইটি কে কেউ বলে না।’
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাভানা আক্তার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ন্যাম ভবনের পরিবেশ খুবই খারাপ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। এ ছাড়া পুলিশরাও তাদের দায়িত্ব পালন করে না।’
‘ভাই’য়ের লোক সম্পর্কে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আসলে এখানে বিভিন্ন এমপিদের ড্রাইভার ও তাদের লোকজন থাকে। আসলে স্টাফরাই থাকে। তাদের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা উচিত। এ ছাড়া গাড়ি রাখার জায়গাও নেই। এত দামি গাড়িগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে।’
এ বিষয়ে কমিটি সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র এখানে প্রভাব বিস্তার করে আসছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল ঠিকাদার। এরা এমপি হোস্টেলের ভেতর অফিস বানিয়ে এবং তিন নম্বর ভবনের জরুরি সিঁড়ি দখল করে থাকত। এটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী সাতদিনের মধ্যে সব সমস্যা দূর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে এমপি হোস্টেলের সমস্যা পরিদর্শনে গিয়ে কমিটির সাত সদস্য তিন নম্বর ভবনের লিফটে প্রায় ১০ মিনিট আটকে ছিলেন বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য নাভানা আক্তার। পরে লিফটম্যানের সহায়তায় তাঁরা বের হয়ে আসেন। এমন সমস্যা মাঝেমধ্যেই হয় বলে লিফটম্যান পরিদর্শক দলকে জানিয়েছেন।
পরিদর্শন শেষে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের এক থেকে ছয় নং সদস্য ভবনে বসবাসরত সদস্যদের সমন্বয়ে কল্যাণ সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে তাঁদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে কমিটি।
এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের গাড়ি রাখার জন্য গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ, দর্শনার্থীদের জন্য ওয়েটিং রুম নির্মাণ, এক থেকে তিন নম্বর ভবন এলাকায় একটি নামাজ ঘর নির্মাণ, সদস্য ভবনের ছাদের প্লাষ্টিকের সেড পরিবর্তন, ড্রাইভারদের জন্য বিশ্রাম কক্ষ নির্মাণ করার সুপারিশ করেছে কমিটি। সংসদ সদস্য ভবনের নিরাপত্তা জোরদার, পিএবিএক্স টেলিফোন সচল করা এবং নির্ধারিত স্থান ছাড়া ড্রাইভারদের যত্রতত্র গাড়ি পরিষ্কার না করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে কমিটি।
একই সাথে সংসদ ভবন এলাকায় মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমাস্যার সমাধান এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোরও সুপারিশ করা হয়েছে।