নওগাঁয় কয়েকটি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
চলতি বছর নওগাঁয় জেলায় আটটি সমবায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দিয়ে হঠাৎ করে কার্যক্রম বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সমবায় সমিতিগুলো হচ্ছে, সদর উপজেলায় সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, ডলফিন সমবায় সমিতি, জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতি, বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন ও মেঘনা সেভিংস অ্যান্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মহাদেবপুর উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং মান্দা উপজেলার আল আরাফাহ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড।
এসব সমবায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচ হাজার গ্রাহকের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। লাগাতার আন্দোলন ও মামলা করেও গ্রাহকরা তাঁদের সঞ্চিত টাকা ফেরত পাচ্ছে না।
ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা ও উপজেলা কার্যালয় থেকে সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধন নেওয়ার পর সমতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের প্রলুব্ধ করে অবৈধভাবে ব্যাংকের আদলে মাসিক ও বার্ষিক আমানত প্রকল্প, স্থায়ী বিনিয়োগ ও স্থায়ী আমানত নামে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে টাকা রাখতে শুরু করে। টাকা জমা রেখে গ্রাহকদের প্রতি মাসে মুনাফা দিতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। ধীরে ধীরে সমিতির গ্রাহকসংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এক সময় গ্রাহকদের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় সমিতির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা।
নওগাঁ জেলা সমবায় সমিতি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর ১১টি উপজেলায় নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা এক হাজার ৬২০টি। এর মাধ্যমে ঋণদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৪৫০টি সমিতি।
গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা নিয়ে একের পর এক সমবায় সমিতির লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন নওগাঁর সাবেক সম্পাদক মাহমুদুন্নবী বেলাল বলেন, ‘প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অসর্তকর্তার কারণে এসব হচ্ছে। এতে নিরীহ ও অসহায় মানুষ সমবায় সমিতির খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছে। এসব সমস্যা উত্তোরণে নিবন্ধন দেওয়ার আগে আরও ভালো করে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। নিবন্ধন দেওয়ার পর সমবায় কার্যালয়কে সমিতিগুলোকে ভালো করে মনিটরিং করতে হবে। এ ছাড়া প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদারকি বাড়াতে হবে।’
গ্রাহকের টাকা সমিতির লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা খোন্দকার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নওগাঁতে ৪৫০টির মতো ঋণদানকারী সমিতির কার্যক্রম বর্তমানে চলমান আছে। এর মধ্যে কয়েকটি সমবায় সমিতি সম্প্রতি গ্রাহকদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত না দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সমিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ও থানাতেও একাধিক মামলা চলমান আছে।’
খোন্দকার মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা উৎপাদনশীল খাতে না খাটিয়ে অনেক সময় সমিতির কর্মকর্তা জমিজমা কিংবা বাড়িগাড়ি কিনে থাকেন। এসব করতে গিয়ে সমিতিগুলো দেউলিয়া হয়ে যায়। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সমিতি পরিচালনার কারণে গ্রাহকরা যখন লভ্যাংশ কিংবা আমানতের টাকা ফেরত চান তখন তাঁদের টাকা দিতে পারছে না সমিতিগুলো। আগামীতে কোনো সমবায় সমিতি যাতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হবে।’