রাজশাহীতে মেস বন্ধ, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগরীর অধিকাংশ মেস বন্ধ করে দিয়েছেন মেস মালিকরা। আজ বুধবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে মেসগুলো।
নির্বাচনকালীন রাজশাহীতে ভোটার ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবে না এমন ঘোষণায় এ পদক্ষেপ নিয়েছেন মেস মালিকরা। এ ছাড়া মেসগুলোতে মেসের সদস্য ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবে না এমন নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, মেস বন্ধ থাকলেও বন্ধ থাকছে না বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বিপাকে পড়েছে রাবি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত হাজারো শিক্ষার্থী।
তবে অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও মেস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মেস বন্ধের কোনো নির্দেশনা আসেনি। মেস মালিকরা নিজেদের সিদ্ধান্তেই মেস বন্ধ করে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানায়, নির্বাচনের সময় মেসে তল্লাশি হতে পারে এমন আশঙ্কায় মেস মালিকরাই মেস বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে যে মেসগুলোতে তল্লাশি হয়, সেগুলোতে পরবর্তীতে আর কোনো শিক্ষার্থী থাকতে চায় না বলেই মেসগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর মোল্লা ভবন, মায়া, আরএস, রিভারভিউ, আতিক, জামান ছাত্রাবাসগুলোর প্রতিটিতেই প্রায় পাঁচশর মতো করে শিক্ষার্থী থাকে। এ ছাড়া অন্য ছোট মেসগুলোতে কমপক্ষে ৩০০ করে শিক্ষার্থী থাকে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানায়, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মেস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ মেস বন্ধ হওয়ায় তাঁরা আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। এই সময়ে অনেকের ক্লাস-পরীক্ষাও রয়েছে। সামনে ঈদের ছুটি। মালিকরা তাদের সুবিধার্থে পুলিশের ঘোষণাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে শিক্ষার্থীদের মেস ছাড়তে বলছেন।
মোল্লা ছাত্রাবাসের মেহেদী হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মেস মালিক সবাইকে মেস ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনের সময় সমস্যা হবে জানিয়ে, তিনি মেস বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে নির্বাচনকালীন ক্লাস-পরীক্ষাগুলোয় অংশ নিতে পারব না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আমিনা খাতুন বলেন, ‘রাজশাহীতে কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। কোচিংয়ে প্রতিদিনই পরীক্ষা থাকে। পড়ার চাপও অনেক। আবার পাঁচদিন ক্লাস মিস গেলে অনেক পিছিয়ে পড়ব। ভর্তি পরীক্ষারও বেশি সময় নেই। কিন্তু এর মধ্যে মালিক মেস ছাড়তে বলেছেন।’
তবে অধিকাংশ মেস মালিক মেস বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, শিক্ষার্থীদের জোর করে মেস ছাড়তে বলা হয়নি। তারা নিজ ইচ্ছায়ই মেস ছাড়ছে।
নগরীর হাবলার মেসের মালিক আবু ওয়াহিদ বলেন, ‘মেস বন্ধের কোনো নির্দেশ আমি দেইনি। আশপাশের মেসগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ায়, আমার মেসের শিক্ষার্থীরাও চলে গেছে।’
অন্য মেস মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরাও একই দাবি করেন।
মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনো মালিককে মেস বন্ধ করতে বলিনি। যারা বন্ধ করছে, তারা নিজ উদ্যোগেই বন্ধ করছে।’
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘মেস বন্ধের কোনো ঘোষণা দেইনি। নির্বাচনের সময় সদস্য ব্যতীত অন্য কারো মেসে থাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’
রাজশাহী সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী বহিরাগতদের অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে আমরা আলাদাভাবে মেস বন্ধের ঘোষণা দেইনি।’