আইনজীবীর সহকারীদের স্বীকৃতি দিতে শিগগিরই আইন
আইনজীবীদের সহকারী হিসেবে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের পেশার স্বীকৃতি দিতে শিগগিরই আইন পাস করা হবে। আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আইনজীবী সহকারী সমিতির চতুর্থ মহাসম্মেলন, ২০১৫-এ একথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা করে পার্লামেন্টে যেন দ্রুত আইনটি প্রণয়ন হয় সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ আইনজীবীর সহকারীদের স্বীকৃতি দেওয়া হলে আদালতে অনিয়ম দূর করা সহজ হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনজীবী সহকারীদের আশস্ত করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে আপনাদের দাবি করতে হবে না। পেশাগত স্বীকৃতি চাওয়া আপনাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি। আপনারা মর্যাদা পাবেন। কাউকে মর্যাদা দিতে শেখ হাসিনার সরকার কার্পণ্য করে না।’
আইনজীবীদের সহকারীরা যে স্বীকৃতি দাবি করছে, তা অত্যন্ত ন্যায্য দাবি জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আপনাদের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ত্রুটি নেই। আলাপ-আলোচনা করে দ্রুত আপনাদের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
আইনজীবীদের সহকারীদের উদ্দেশ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে আপনাদের দাবি করতে হবে? আমি আপনাদেরই একজন। মন্ত্রী হয়েছি তাতে কী হয়েছে? আমি ১৯৮৫ সালে আইনজীবী হয়েছি। কিন্তু আমার বাবা আইনজীবী ছিলেন বিধায় আমার কাজ শেখা বাসা থেকে হয়েছে। তবে আদালতে কীভাবে রিট, মামলার ড্রাফটিং করতে হয় তা আমি মঈনুদ্দিন পাটোয়ারি নামক একজন ক্লার্কের কাছে শিখেছি।’
এ সময় সারা দেশে আইনজীবীর সহকারীদের তহবিলের জন্য পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দেন আইনমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘মামলা পরিচালনা করতে আইনজীবীরা যে ফি পান তার একটা অংশ সহকারীদের দেওয়া উচিত। এতে তাঁদের কাজে আগ্রহ বাড়বে। আইনজীবীর সহকারীরা সৎ থাকলে আইনজীবীর জন্য কাজ করা সহজ হয়ে যায়। আইনজীবীরা প্রত্যেক মামলার ফির একটি অংশ সহকারীদের প্রদান করলে তাদের পক্ষে সৎ থাকাটা সম্ভব।’ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম এখনো মামলার ফির একটি অংশ তাঁর সহকারীদের মধ্যে বণ্টন করেন বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘জাল সার্টিফিকেটের কাছে আইনজীবীরা এবং আইনজীবীর সহকারীরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সহকারীদের সচেতন হতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলা ফাইল করতে হলে প্রতিটি টেবিলে ঘুষ দিতে হয়। একজন আইনজীবীর সহকারী একটি মামলা করতে গিয়ে যে পারিশ্রামিক পান, একটি মামলা ফাইল করার সময় তার চেয়ে বেশি টাকা ঘুষ দিতে হয়। সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের জেলা আদালতগুলোতে একই অবস্থা। এদের বিচার করবে কে? ’
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করছে না। বরং দেশের বড় বড় সব মামলার বিচার কাজ করে সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করছে। ফোন দিয়ে বিচার ব্যবস্থার ওপর মন্ত্রণালয় থেকে কোনো মামলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয় না। আইনজীবীর সহকারীদের স্বীকৃতি দেওয়া হলে আদালতে টাউট বাটপারদের দৌরাত্ম্য কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি নুর মিয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হারুন অর-রশিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, আ্যডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট বশির আহমেদ এবং অল ইন্ডিয়া ক্লার্ক আইনজীবী কার্যকরী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক কুমার মণ্ডল।
অনুষ্ঠানে আইনজীবীর সহকারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বীকৃতিসহ মোট নয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।