পবিপ্রবিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ-ভাঙচুর, আহত ১০
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) আধিপত্য বিস্তার ও
আঞ্চলিকতার দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় হামলা-
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
urgentPhoto
গতকাল রোববার আনুমানিক রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম কেরামত আলী হল ও শেরেবাংলা আবাসিক ছাত্র হলে মারামারি, হামলা-সংঘর্ষ ও কক্ষ ভাঙচুরের এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত ৯টার দিকে বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা ক্যাম্পাসগামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি শুরু হয়।
বাসটি ক্যাম্পাসে পৌঁছার পর এ খবর ক্যাম্পাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার জের ধরে আনুমানিক রাত পৌনে ১২টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র তানিম (২১) গুরুতর আহত হন।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আযম খান ফারুকীর নেতৃত্বে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে আসে একদল পুলিশ। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায়ও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় পরে রাত সোয়া ১টার দিকে সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে পটুয়াখালী থেকে দাঙ্গা পুলিশের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরবর্তী সময়ে সংঘর্ষ এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিবদমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গভীর রাত থেকে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডি।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত তানিমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া আহত মুনান, বায়েজিদ, বিজয়, ইমন, ফাহিম, সাজিন, তানজিলসহ কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আজ সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর উভয় পক্ষই ফটকের সামনে ভেতরে ও বাইরে জড়ো হয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় ফটক দুটি বন্ধ থাকায় পথচারী ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. রবিউল হকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পটুয়াখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার সাহেব আলী পাঠান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান, দুমকি থানার ওসি আযম খান ফারুকীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দুটি ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী জানান, সংঘর্ষের সময় হল দুটি থেকে কয়েকটি ল্যাপটপ চুরি এবং ৪০টির মতো কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান আনিস ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহমেদ রিমন জানান, আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই পক্ষের সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও জানান তাঁরা।