নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙন, ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পদ্মার আগ্রাসী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরজুজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী পাঠদান কেন্দ্রটি। এতে ভেঙে পড়েছে পাঠদান ব্যবস্থা।
অস্থায়ীভাবে পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা হলেও দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। ভাঙন পরিস্থিতি শান্ত হলে অস্থায়ী পাঠদান কেন্দ্রগুলো শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি কোনো অবস্থানে চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানায়, দুই মাস আগেও পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি ছিল শিক্ষার্থীদের কোলাহলে সরগরম। দুই মাসের ব্যবধানে এখন সেই মাঠে খেলা করছে পদ্মার ঢেউ। পদ্মার গ্রাসে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিলীন হয়ে গেছে চরজুজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী পাঠদান কেন্দ্রটিও। পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়েছে পৌরসভার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল বেপারীর বাড়িতে। আর চরজুজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে মূলফৎগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। বিদ্যালয় দুটিতে ২৪৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও নদী ভাঙনের কারণে কমে গেছে উপস্থিতি। পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরাও পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এতেও কমে গেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার। ভেঙে পড়েছে ওই এলাকার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা।
পূর্ব নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাদ মালত (১০) বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নতুন করে আরেক জায়গায় ক্লাস শুরু করেছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় ওইখানে আমরা পড়তে যাইতে পারতাছি না। আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে ক্লাস নেওয়া হয়।’
একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আইভি আক্তারের মা লিমি আক্তার বলেন, বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পৌরসভার একটি বাড়িতে পাঠদান কার্যক্রম চালু করেছে। শিশুরা অত দূরে যেতে পারছে না। রাস্তাঘাট সব বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের বাচ্চাদের লেখাপড়াও এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
চরজুজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সোলায়মান বলেন, চরজুজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় পাঁচ বছর আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ওই গ্রামেই অস্থায়ীভাবে পাঠদান চালু রাখা হয়েছিল। এ বছর পদ্মা নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়ের অস্থায়ী জমিটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নড়িয়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সানোয়ার বলেন, বিদ্যালয় দুটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর অস্থায়ীভাবে পাঠদান কর্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। ভাঙন পরিস্থিতি শান্ত হলে ভেঙে যাওয়া বিদ্যালয়গুলোর কাছাকাছি গিয়ে অস্থায়ীভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে শিশুদের স্কুলে আসতে সুবিধা হয়।