পদ্মার ভাঙনকবলিত এলাকায় সোমবার থেকে ড্রেজিং : সচিব
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে নড়িয়া-জাজিরার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাঁধের কাজ শুরু করবে সরকার। ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করতে আজ একটি ড্রেজার এসে পৌঁছেছে ভাঙনকবলিত এলাকায়। আগামীকাল সোমবার থেকে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে।
আজ রোববার সকালে কেদারপুর, মুলফৎগঞ্জ, বাঁশতলায় ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে দুপুর পৌনে ১টার দিকে নড়িয়া উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সচিব এসব কথা বলেন।
কবির বিন আনোয়ার বলেন, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের জন্য জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার নয় কিলোমিটার জুড়ে পদ্মার ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গত ২ জানুয়ারি একনেক সভায় পাস করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা।
‘২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে পদ্মার ভাঙনের তীব্রতা রোধে জুলাই মাসে সাড়ে ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ অর্থ ব্যবহার করে ১১ জুলাই থেকে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়ে তা এখনো অব্যাহত আছে। মূলফৎগঞ্জ বাজারের পদ্মার পাড়ে জিও ব্যাগ ফেলে কিছুটা হলেও ভাঙন ঠেকাতে পেরেছি। এই খাতে নতুন করে আরো দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ‘নড়িয়া-জাজিরা উপজেলায় নয় কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। তার মধ্যে চার কিলোমিটার বেশি ভাঙছে। আর এই চার কিলোমিটার ভাঙন রোধে সাময়িকভাবে কাজ শুরু করা হবে। পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙন রোধে আমরা চেষ্টা করেও পরাস্ত হয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা চলমান আছে। পদ্মার স্রোত নড়িয়া-জাজিরার তীরের দিকে যাচ্ছে। তাই মাঝখানের চরগুলোকে কেটে ওই দিক দিয়ে পানি প্রবাহিত করার চেষ্টা চলবে। স্রোত ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে কাটতে হবে যেন ওপারে ভাঙন শুরু না হয়। ভূমি খাত দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। প্ল্যান করেই কাজ শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই কাজে নড়িয়া এলাকায় একটি ড্রেজার এসেছে। আরেকটি ড্রেজার দুই-একদিনের মধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকায় পৌঁছে যাবে।’
নড়িয়া-জাজিরা এই অংশে ৯ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ করা হবে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব আরো বলেন, আর ৯ দশমিক ৯০ কিলোমিটার ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া একনেকে চারটি বড় প্রকল্প অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্ষার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর ডানতীর ও বামতীর বাঁধ রক্ষায় এক হাজার ৪৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প এই শুকনো মৌসুমে শুরু হবে। আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি ও পদ্মা নিয়ে আরো দুই হাজার ৯১ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়েছে। প্রতিবছর পদ্মায় ভাঙনে সহায়-সম্বলহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের কথা চিন্তা করে স্থায়ী বাঁধ গড়ে তোলা হবে। ১০০ বছরের পরিকল্পনা এটি। নদ-নদীর জন্য আগামী ১২ বছরে দুই লাখ ২৯ হাজার টাকার ৮০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। যে প্রকল্পগুলো সরাসরি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের।
এ দিকে আজ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনকবলিত এলাকার এক হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও সাড়ে ৩০০ পরিবারের মাঝে ঘর নির্মাণের জন্য দুই বান করে ঢেউটিন ও ছয় হাজার করে টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামিম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান, জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের, উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।