খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে বিএনপির নতুন কর্মসূচি
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
নতুন কর্মসূচির মধ্যে ৩১ অক্টোবর সারা দেশে মানববন্ধন ও ১ নভেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশে গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। একই সঙ্গে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী জেলা সদর এবং ঢাকা মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, আমরা ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করার জন্য। তিনি বলেন, ঢাকায় মানববন্ধন হবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। আর অনশনের জন্য আমরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আবেদন করব।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আজ আমাদের নেতারা আলোচনা করেছেন শুধু খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়ে। সংলাপের বিষয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আজ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালতের বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন একই আদালত। রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে ওই দিন বিকেলে (৮ ফেব্রুয়ারি) নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় আজ রায়ের সময় আদালতে হাজির ছিলেন না। এমনকি এই মামলার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তাঁর কোনো আইনজীবীও যাননি রায় শুনতে। তবে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে হাজির ছিলেন।
এই মামলার অন্য তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এঁদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। বাকি দুই আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত আজ এই তিনজনকেও অভিন্ন সাজা দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে উপস্থিত দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে রায়ে যে ৪২ কাঠা জমির ক্রয় নিয়ে মামলার সূচনা, সেই জমিটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
রায়ে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, তার জন্য আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের ক্ষেত্রে ১৫টি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে না আসায় তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান আদেশ দেন।
এ আদেশ বাতিল চেয়ে রিভিশন আবেদন করলে ১৪ অক্টোবর হাইকোর্ট আবেদন খারিজ করে দেন। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ১৫ অক্টোবর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
এরপর ১৬ অক্টোবর বিচারিক আদালত এ মামলার রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় আজকের জিয়া চ্যারিটেবল মামলার রায় হবে কি না, তা অনেকটা আপিল বিভাগের পরবর্তী আদেশের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে। আপিল বিভাগের আদেশের পর সেই বাধা কেটে যায়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারের একটি কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করেন। ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে আদালত বসে। কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া সেদিন আদালতে হাজির হয়ে আদালতকে বলেছিলেন, এ আদালতে ন্যায়বিচার নেই। তিনি অসুস্থ। আদালতে আসবেন না। যত দিন ইচ্ছে আদালত তাঁকে সাজা দিতে পারেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ।