তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী : জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট
তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী বলে দাবি করছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বিএনপিসহ অন্য দলগুলো যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সে উদ্দেশ্যেই এভাবে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।
আজ শুক্রবার রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় পর্যায়ের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত এই জনসভাতেই নেতারা এসব কথা বলেন।
গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এসব কথা বলেন।
তফসিল ও নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে এখনো বলব, তফসিল পিছিয়ে দেন। তফসিল বদলান। আমরা আন্দোলন করছিলাম, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে। আর আপনারা এমন একটা ফাঁদ পেতেছেন, যাতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি। ওই ফাঁদ, ওই বেড়াজাল, ওই অত্যাচার ছিন্ন ভিন্ন করে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ছবি : স্টার মেইল
জনসভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিয়েছে। আমরা যাতে নির্বাচনে না যেতে পারি, দেশের ৯০ ভাগ ভোটারকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বাদ দিয়ে, সাত দফা না মেনে নির্বাচন বাংলাদেশে হতে পারে না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তাদের সকলকে মুক্তি দিতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। তবেই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। তবেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। নির্বাচনের সমান মাঠ তৈরি করতে হবে। সকল দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে বের করে নিয়ে এসে তাঁকে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো নির্বাচনী তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদেরকে দাবি আদায় করতে হবে। জনগণের রায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের একাংশ। ছবি : স্টার মেইল
এ সময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি বলতে খালেদা জিয়া। তাই, খালেদা জিয়াকে আর বন্দি করে রাখা সম্ভব নয়।’
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন হবে কিনা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ আমরা করব কিনা। এটা এখনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। তবে একটা সিদ্ধান্ত স্পষ্টভাবে হয়েছে, সেটা হলো বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।’
আজ দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আজকের জনসভায় যোগ দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তবে তিনি জনসভায় মুঠোফোনে বক্তব্য দিয়েছেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহীর সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, উপদেষ্টা এসএম আকরাম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও মো. শাহজাহান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভঅগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।
রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের একাংশ। ছবি : স্টার মেইল
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহীতে এটি চতুর্থ সমাবেশ। এর আগে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় জনসভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ নভেম্বর সোমবার। মনোনয়ন বাছাইয়ের শেষ তারিখ ২২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। ২৩ ডিসেম্বর রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।