বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ইসিতে হাবিবের অভিযোগ

সাতক্ষীরার-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. হাবিবুল ইসলাম হাবিবের বাড়ি গিয়ে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাঁর সমর্থকদের বাড়ি গিয়েও হামলা করছে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বরাবর অভিযোগ করেছেন প্রার্থী নিজেই। এ অবস্থায় কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গিয়ে হাবিবুল ইসলাম হাবিব সিইসি বরাবর এই অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ১৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত আমার কলারোয়ার নিজ বাড়ি, কলারোয়া পৌরসভার মেয়র গাজী মো. আক্তারুল ইসলাম, কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রকিব মোল্ল্যা, কেড়াগাছি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতক্ষীরা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি শেখ আবদুল কাদের বাচ্চু, পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ শেখ কামরুল হোসেন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শরিফুজ্জামান তুহিন, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এ হাকিম সবুজ, সাবেক কাউন্সিলর মো. মফিজুল ইসলাম মফিসহ আরো আট-দশজনের বাড়িতে গিয়ে সারা রাত কলারোয়া থানার পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডাররা একত্রিত হয়ে ঘরের দরজা, জানালা ও অনেক বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বিএনপি নেতাদের নাম ধরে বাড়ির অন্য সদস্যদের হুমকি দিয়ে বলে, ‘ভোটের আগে বাড়ি এলে হত্যা করা হবে।’
সিইসির কাছে দেওয়া অভিযোগে হাবিব বলেন, কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট না থাকা সত্ত্বেও আমার নেতাকর্মীদের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে গিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে কলারোয়া থানার পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি দলের ক্যাডাররা, যাতে কেউ ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে না যায়। এ ছাড়া কলারোয়া থানার পুলিশ প্রশাসন প্রতি রাতে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ৩০ থেকে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করছে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তাদের অজ্ঞাতনামা মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।
লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘আমি (প্রার্থী) গত ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় আমার কলারোয়ার নিজ বাসভবনে দলীয় কর্মীদের নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী মতবিনিময় করার সময় কলারোয়া থানা থেকে মাত্র ১০০ গজ উত্তরে অবস্থিত হাইস্কুল মার্কেটে পৌঁছালে পুলিশের সামনেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোস্তাফা লুৎফুল্লাহ এবং কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মদ স্বপনের নির্দেশে ২০ থেকে ৩০ জন আওয়ামী সন্ত্রাসী পিছন দিক থেকে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে।
ওই হামলার শিকার হয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক বজলুর রহমান রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পড়েন। তাঁর চিকিৎসার জন্য লোকজন এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়, যেন কেউ তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে না পারে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে প্রকাশ্যে রাস্তার ওপর পড়ে থাকে। যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গোটা জাতি দেখেছে। তা ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও প্রচার করা হয়েছে। যার সত্যতা প্রমাণে ভিডিওফুটেজ সাংবাদিকদের কাছে সংরক্ষিত আছে। বিষয়টি গোটা জাতি দেখলেও কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মেদ দেখেননি। আধা ঘণ্টা পর অ্যাম্বুলেন্স এসে রাস্তার ওপর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় বজলুর রহমানকে অচেতন অবস্থায় তুলে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বিএনপির প্রার্থী হাবিব অভিযোগে বলেন, এ ছাড়া তগদীর আহসান রুবেল ও হাফিজ নামের আরো দুই কর্মীকে হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে মাথায় ও হাতে আঘাত করলে তারাও রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে ছটফট করতে থাকেন। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরায়, পরে ঢাকাতে এনে চিকিৎসা করা হয়। তগদীর আহসান রুবেল বর্তমানে ঢাকাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। তার বাম হাত ভেঙে গেছে, মাথায় আটটি সেলাই দিতে হয়েছে। আর আট-দশজন কর্মী আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে গেছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, এমন তাণ্ডবের পরও কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বরং তাদের উৎসাহিত করে নিজেকে তাদের দলীয় কর্মী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। যে কারণে তার কাছে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হবে না বুঝেই আমরা কোনো অভিযোগ দাখিল করিনি। উল্টো প্রার্থী হিসেবে আমি যাতে কোনো প্রকার প্রচারণায় নামতে না পারি সেই উদ্দেশ্যে আমিসহ আমার ৪৬ জন নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রেখে সরকারি দলের প্রার্থীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। এই কারণে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে কলারোয়া থানায় বহাল রেখে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
চিঠির শেষে সিইসির উদ্দেশে বলা হয়, উপরে বর্ণিত ঘটনার দ্রুত এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদকে অনিতিবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিরপেক্ষ নির্বাচনে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।