বাইরের কেউ সংকট নিয়ে কথা বলেননি : প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা নেই—এমন বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে আমার কাছে অনেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। প্রত্যেকটা হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট যে অনুষ্ঠান করেছে, সবগুলোতে আমাকে দাওয়াত দিয়েছে। তাদের কাছে যদি সরকারের বৈধতা না থাকত, তাহলে তো তারা আমাকে দাওয়াত দিত না।’
urgentPhoto
আজ রোববার দুপুরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানাতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুলের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখানে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারের বৈধতা নিয়ে সেই প্রশ্ন যদি তাদের মধ্যে থাকত, তাহলে এই প্রস্তাব তারা দিত না। সবার সঙ্গে যখন আলাপ হয়েছে, আমি তো ওখানে অনেক পুরোনো। এই প্রশ্ন তো কেউ করে নাই। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন এমপি বাংলাদেশে আছেন। তিনি বলেছেন, কই বাংলাদেশে আমি তো ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমি তো কোনো সংকট দেখছি না।’
একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক, এটা তো অনেকেই চান না। তবে যে যেভাবেই ব্যাখ্যা দিক, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি আমাদের জন্য সবচেয়ে অগ্রগণ্য। সে জন্য সবকিছু আমরা করব।’
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৩ দিন ধরে আন্দোলনে বিএনপি নেত্রী তো অফিসের মধ্যে সরকারের উৎখাতের জন্য দেড়শ মানুষকে মেরেই ফেলল। কয়েকশ মানুষকে আহত করল। এই যে মানুষকে পোড়াল, এর কী জবাব দেবে তারা? অবশ্য তাদের লবিস্ট আছে, টাকা আছে। এই দিয়ে অনেক কিছু বলাতে পারে, লেখাতে পারে। তবে আমি এটুকু বলব যে সবার ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।’
এসব বিষয়ে গণমাধ্যমকে সজাগ থাকার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীর বিচার চললে তারা তো প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করতেই থাকবে। কিন্তু আপনাদের সাংবাদিকদের উচিত এ ব্যাপারে আতঙ্কিত না হয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করা।’
বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা নিয়ে বিশ্বনেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিস (এলডিসি)-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ। যদি রাজনীতি নিয়ে সংকট বা প্রশ্নই থাকত, তাহলে এই নেতৃত্ব কীভাবে বাংলাদেশের হতো? বাইরের কেউ সংকট নিয়ে কথা বলেননি। সংকট এখানে কিছু লোকের মনের সংকট।’
সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, এই যে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশে খেলতে এলো না, তাতে আমরা যত হাহাকার করেছি, তাতে মনে হয়ে গেছে যে কী যেন হলো না। দেশে মানুষ মারা যাচ্ছেন, ডেফিনেটলি সবাই কনসার্ন হবো। কারা দায়ী, এগুলো আমাদের জানালেই আমরা খুশি। আমরা দেখতে চাই যে সিকিউরিটি এজেন্সির লোকজন কাজ করছে, মাঠে যাচ্ছে, বৈঠক করছে আর আমাদের আপডেট দিচ্ছে। তাহলেই আমরা খুশি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বড়টা পেলে সেটা দেখি না। কোথাও একটা কিছু পেলে হাহাকার শুরু করে দিই। কেন এই হাহাকার? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আমরা কিন্তু দ্রুত ব্যবস্থা নচ্ছি। কেউ বসে নেই।’
মিডিয়াকর্মীদের পয়লা বৈশাখের ভাতা দেওয়ার আহ্বান
এ সময় পয়লা বৈশাখে ভাতা দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এর কার্যকারণ সম্পর্কে জানান শেখ হাসিনা। সে সঙ্গে বলেন, সংবাদপত্রের মালিকরা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকরা যদি পয়লা বৈশাখের ভাতা তাঁদের কর্মীদের দিয়ে দেন, তাহলে তিনি খুশি হবেন।
প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে করা একটি মার্কিন জরিপের ফলাফল ও রেটিং সম্পর্কে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার রেটিং যা-ই হোক না কেন, আমার শিকড় কিন্তু আমার দল। দলের সহযোগিতা আছে বলেই আমি এতদূর উঠতে পেরেছি। আর সরকারের রেটিংয়ের বিষয়টা ভিন্ন ব্যাপার। এটা জনগণের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু আমি এই যে উঠে এলাম, আমার যা কিছু অর্জন তা সবই আমার দলের কারণে। দলে কোনো ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি কি না, সেটা হচ্ছে বড় বিষয়।’
‘পাকিস্তানের মেয়েরা সাহস পাবে’
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলকে কেন পাকিস্তানে পাঠানো হলো—সাংবাদিক মুন্নী সাহার এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা সেখানে খেলতে গিয়ে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। আমাদের মেয়েরা সাহসী। কেন গেল—এ প্রশ্ন তুলবেন না। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে পাকিস্তানের মেয়েরা সাহস পাবে। খেলার যে রেজাল্টই হোক। আমরা গিয়েছি এবং খেলে এসেছি, সেটাই বড় কথা।’
ইতালি ও জাপানি নাগরিক হত্যার সঙ্গে আইএস সংশ্লিষ্টতা আছে কি না বা কোথা থেকে এই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মিডিয়া কী করছে? আপনার খুঁজে বের করেন। গুলশানে হত্যার পর শিকাগো থেকে স্বীকারোক্তি এলো। আপনারা খুঁজে বের করেন। মিডিয়াও তো অনেক কিছু খুঁজে বের করে।’
‘কথা নেই বার্তা নেই, উনারা আন্দোলন শুরু করলেন’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের ৯১ পার্সেন্ট বেতন বাড়িয়েছি। কেউ কি কোনো দিন কল্পনা করেছেন? আমার মনে হয়, একটু বেশি দিয়ে ফেলেছি। আরেকটু কমায়ে দেওয়া উচিত ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনারা (শিক্ষক) সচিবদের সঙ্গে তুলনা করছেন। উনারা যেসব সুবিধা পান, সেসব কি সচিবরা পান? সরকারি কর্মকর্তা ও সচিবদের চাকরির মেয়াদ ৫৯ বছর পর্যন্ত আর শিক্ষকদের ৬৫ বছর পর্যন্ত। এগুলো তো মাথায় রাখতে হবে। কথা নেই বার্তা নেই, উনারা আন্দোলন শুরু করলেন। তার মানে সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত উনারা বেতন গ্রহণ করবেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোনো সচিব কিন্তু অন্য কোথাও চাকরি করতে পারেন না। কিন্তু উনারা পারেন। বাংলাদেশের কোন শিক্ষক কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন, সেই তালিকা কিন্তু আমার কাছে আছে। অথচ কথা নেই বার্তা নেই, উনারা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিলেন। এই ছেলেমেয়েগুলোর কী অবস্থা হচ্ছে? ক্লাসগুলো তো ঠিকমতো নিতে হবে। আন্দোলন যখন করছে, করতে থাকুক। আমার হস্তক্ষেপের কিছু নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমার সরকারের মতো এত উন্নয়ন কেউ করেনি। তবে যেহেতু ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে, সেখানে আমার তো আর কিছু বলার নেই। অর্থমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রী আছেন, কমিটির সদস্যরা আছেন, তাঁরা দেখবেন। আমার কিছু বলার নেই। এক ভিসি দিলেও তাঁরা ভিসিবিরোধী আন্দোলন করেন। ঠিক আছে, আমি বললাম যারা আন্দোলন করছে তাদের মধ্যে থেকে ভিসি বানায়ে দিই। সেটাতেও তারা রাজি না। তাহলে? যতদিন আন্দোলন না বন্ধ হবে, ততদিন বর্ধিত বেতনও তারা নেবে না। সেটাই তো হওয়া উচিত নাকি?’
‘আইএসের কোনো ঘাঁটি গড়ে ওঠেনি’
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে নতুন কী স্ট্র্যাটেজি বাংলাদেশ হাতে নিয়েছে, তা জানতে চান সাংবাদিক জ ই মামুন। এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সবচেয়ে প্রয়োজন জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাব শক্তিশালী করা। কেউ এদের প্রশ্রয় দেবে না, খবর পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবে, আমরা ব্যবস্থা নেব। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীবাদ থাকলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয় না। দীর্ঘ তিন মাস একাধারে মানুষ মারা, এটাও তো সন্ত্রাসবাদ। এখানে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সরকার জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদীদের কোনো ধর্ম নাই, তাদের কোনো সীমানাও নাই।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়চিত্তে বলেন, বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদীদের প্রশ্রয় দেয় না। এখন পর্যন্ত এখানে আইএসের কোনো ঘাঁটি গড়ে ওঠেনি।