প্রথমবার সাংসদ হয়েই মন্ত্রিসভায় শামীম
১৮ বছর পর সরকারের মন্ত্রিসভায় একজন সদস্যকে পাচ্ছে শরীয়তপুরবাসী। প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েই মন্ত্রিসভার সদস্য হতে যাচ্ছেন গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত এ কে এম এনামুল হক শামীম।
সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য আজ রোববার ফোন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। কাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবেন তিনি।
দীর্ঘদিন থেকে শরীয়তপুরে কোনো মন্ত্রী নেই। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রয়াত আবদুর রাজ্জাককে মন্ত্রী করা হয়। ২০০১ সাল পর্যন্ত পানিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর শরীয়তপুরের আর কোনো সাংসদ মন্ত্রী হতে পারেননি। ১৮ বছর পর মন্ত্রিসভায় শরীয়তপুরের একজনকে নেওয়া হলো। মন্ত্রী হওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ শরীয়তপুর জেলার মানুষ আনন্দে আপ্লুত হয়ে পড়েছে।
এ কে এম এনামুল হক শামীম স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৮৬ সালে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরপর তিনবার সদস্য ও সহ-সভাপতি পদ লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। টানা চার বছর তিনি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় বিএনপি-জায়ামাত জোট সরকারের হাতে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। শামীম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন একাধিকবার। ২০১২ সালে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।
এনামুল হক শামীম রাজনীতির পাশাপাশি বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন এবং একটি বেসরকারি ব্যাংকেও তাঁর অংশীদারত্ব রয়েছে। শামীমের হাত ধরে শুধু নড়িয়া-সখিপুরেরই নয়, গোটা শরীয়তপুর জেলার শত শত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাকা শহরের নামিদামি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প খরচে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও জেলার অনেককে সহায়তা করেছেন। এনামুল হক শামীম চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দলীয় নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
নড়িয়া পৌরসভার মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম (বাবু রাঢ়ী) বলেন, জেলায় একজন মন্ত্রী প্রয়োজন ছিল। মন্ত্রী না থাকলে উন্নয়ন কাজ ত্বরান্নিত হয় না। বড় প্রকল্পের উন্নয়ন করতে মন্ত্রীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন। আমাদের এ অঞ্চলের অভিভাবক এনামুল হক শামীম বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। আমাদের প্রাণপ্রিয় সভানেত্রী নতুন প্রজন্মের নেতা এনামুল হক শামীমকে উপমন্ত্রী পদ দিয়েছেন। এজন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকন বলেন, অবহেলিত শরীয়তপুরকে উন্নয়নের রোল মডেল করার ঘোষণা দিয়েছেন এনামুল হক শামীম। তাঁর নির্বাচনে নানা প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেসব বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবেন তিনি। যেহেতু তাঁকে উপমন্ত্রী করা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হবে। তাঁকে উপমন্ত্রী করে আমাদের দাবি পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, জেলার উন্নয়ন ত্বরান্নিত করতে আমাদের মন্ত্রী প্রয়োজন ছিল। এ কে এম এনামুল হক শামীমকে উপমন্ত্রী করে আমাদেরকে উপহার দেওয়া হয়েছে। আমরা আনন্দিত।
এ কে এম এনামুল হক শামীম উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার ফোন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, এলাকার মানুষের ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ। তাদের ভালবাসার কারণে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। তাদের প্রত্যাশা পূরণে সবসময়ে কাজ করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত উন্নয়নমূলক কাজগুলো করে যেতে চাই।