সাতক্ষীরা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদককে ৪ ঘণ্টা ঘেরাও

টানা চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা। তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানোর জন্য প্রার্থী বাছাই ভোটের মাধ্যমে হবে কি হবে না এই বিতর্কের জেরে তাদেরকে গাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সদরে আজ শনিবার অবরুদ্ধ অবস্থায় বারবার তাদের গায়ে হাত তুলতেও উদ্যত হন নেতাকর্মীরা। এ সময় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভোটের পক্ষে বিপক্ষে উত্তেজনাকর স্লোগান দেন।
তবে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেল বিকেল সাড়ে ৪টায় জানান, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হওয়ায় কিছুক্ষণ আগে অবরোধকারীরা তাদের অবরোধ তুলে নিয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে আসা জেলা পর্যায়ের নেতারা এখন সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন। তারা নিরাপদে জেলা শহরে ফিরেও গেছেন।
ওসি আরো জানান, আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় তালা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রার্থী মনোনয়নে ভোটাভুটি হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থী মনোনয়নের জন্য পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বেলা ১১টায় তালা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দলের প্রতিনিধি সম্মেলন বসে। ২৯১ জনের এই প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম। এতে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম।
প্রার্থী মনোনয়নে দলের গঠনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এতে। এ সময় প্রস্তাব আসে, একজন না হলেও সর্বোচ্চ তিনজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা ১৫ জন। ফলে নেতাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় আওয়ামী লীগের একপক্ষ ভোটাভুটির দাবি জানায়। অপর পক্ষের লোকজন সমঝোতা ভিত্তিক নাম পাঠানোর কথা বলেন। ভোটাভুটি প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েন দলের উপজেলা সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম এবং সম্পাদক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার ও তাঁদের সমর্থকরা। তুমুল হট্টগোলের মধ্যে ভণ্ডুল হয়ে যায় প্রতিনিধি সম্মেলন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১২টার দিকে নেতারা তাঁদের গাড়ি নিয়ে বাইরে আসতেই শিল্পকলা একাডেমির সামনে অবরোধের মুখে পড়েন। নেতৃবৃন্দকে প্রতিরোধে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, কাঠের খণ্ড ও ইটপাটকেল জড়ো করা হয়।
এ সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে পৌঁছালেও তারা কোনো ভূমিকা নেয়নি। চারদিকে তখন মুহুর্মুহু স্লোগান উঠতে থাকে, উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে অবরুদ্ধ থেকে তারা গাড়ির ভেতর থেকে বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করেন। কিন্তু কেউই তাদের উদ্ধারে কোনো আগ্রহ দেখাননি। পরে তারা আগামীকাল রোববার ভোটাভুটি হবে, এমন সিদ্ধান্ত দিলে বিকেল ৪টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, চেয়ারম্যান পদে ১৫টি, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯টি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬টি আবেদন পড়েছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা ভোটের দাবি করেছিলাম। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা নেতারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখে পড়েন। এখন এর শান্তিপূর্ণ মীমাংসা হয়েছে বলে জানান তিনি।