আমি মন্ত্রিত্বের রাজনীতি করি না : শামীম ওসমান
সন্ত্রাস, ইভটিজিং, জুলুম, ভূমিদস্যু ও খারাপ কাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেছেন, ‘এমপি, মন্ত্রী আমার কাছে বড় ব্যাপার না। আমাকে দুইবার মন্ত্রী দেওয়া হইছে, আমি নেই নাই। আমি মন্ত্রিত্বের রাজনীতি করি না।’
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান।
আজ শনিবার বিকেলে নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাকের ওপর মঞ্চ তৈরি করে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের কারণে নগরীতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় নগরবাসী।
সভায় বক্তৃতাকালে যানজটের জন্য নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চান শামীম ওসমান। তিনি বলেন, যারা আমার দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, যারা এই দেশকে স্বাধীন করেছেন, যারা বাংলা মাকে স্বাধীন করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন তাদের জন্য একদিন কষ্ট করাটা আমার মনে হয় আমাদের কর্তব্য।
সাংসদ শামীম ওসমান নিজের কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, আমার ডানে বামে কেউ কেউ থাকতে পারেন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমি তাদের চিনি না। আপনারা ভালো হয়ে যান।
শামীম ওসমান সন্ত্রাস, ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসায়ী ও ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কাজে নামার জন্য নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব, আইনজীবী সমিতি, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে তাঁর সঙ্গে থাকার আহ্বান জানান।
শামীম ওসমান বলেন, আমার সঙ্গে থাকে এবং আমার-আপনার নাম বেচে মাস্তানি করে, মাদক বেচাকেনা করে। এমন কেউ থাকতেও পারে। আমার সামনে তো সবাই ভালো। ফেরেশতার মতো থাকে সবাই। বাট সাবধান হয়ে যান। মাদক যে বেচে সে ইবলিশ শয়তান। এই শয়তানের সঙ্গে আঁতাত হবে না, কারণ ওরা আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিতে চায়। আপনার বাচ্চা, আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে চায়। ওদের ছাড় দেওয়া হবে না।
নিজেকে দলের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য বলেন, আমার দলের নেতাকর্মীদের কারো জন্য যদি আমার নেত্রীর নামে বদনাম হয়, জাতির পিতার কন্যার নামে বদনাম হয়। এমন কাজ যদি কেউ করে তাকে মনে রাখতে হবে আর কেউ হোক না হোক শামীম ওসমানের হাত আপনার ঘাড়ের সামনে আছে, আপনাকে ধরা হবে ইনশা আল্লাহ।
‘আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি। মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতা, খারাপ কাজ, মানুষের ওপরে জুলুম যারা করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে আমার পেছনে থেকে সাপোর্ট চাই না। শুধু আপনাদের দোয়া চাই, যাতে কাজটা ঠিকঠাক মতো করতে পারি। যতো দিন বেঁচে আছি, সেই সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলবো।’
‘এমপি হয়েছি, আজকে আছি, কালকে নাই। এমপি-মন্ত্রী আমার কাছে বড় ব্যাপার না। এইখানকার মিটিংয়েই বলেছি হানিফ ভাইয়ের সামনে, যে আমাকে দুইবার মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে, আমি নেই নাই। আমি মন্ত্রিত্বের রাজনীতি করি না। কারণ আমি মনে করি নাই, যে শেখ হাসিনার মতো এতো বড় নেতা, এতো উঁচু মানের মানুষ, আল্লাহ সাক্ষী, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাক্ষী, এতো উঁচু মানের মানুষ যিনি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী হয়ে তাঁর পাশে বসার যোগ্যতা আমার হয় নাই, আর হবেও না কোনো সময়। আমি তাঁর কর্মী হতে পেরেছি, এইটাই তো অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।’ বলছিলেন শামীম ওসমান।
সমাবেশে শামীম ওসমান স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সমালোচনা করে বলেন, ওই সংবাদপত্রে রিপোর্ট করেছে আমি নাকি আজকের এই সমাবেশ পুলিশের বিরুদ্ধে করছি। আমি পুলিশের বিরুদ্ধে সমাবেশ করব কেন? নারায়াণগঞ্জের জেলা প্রশাসক বাংলাদেশের মধ্যে বেস্ট জেলা প্রশাসক। পুলিশ সুপার একজন দক্ষ কর্মকর্তা। তিন তিনবার তিনি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম নিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের দুই-একটা পত্রিকা আছে। এইগুলারে পত্রিকা বলা যায় কেমনে। পত্রিকা মানুষ পয়সা দিয়ে কেনে। এগুলো হলো যারা ছাপায় তারাই আবার রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে লাগায়। টাকা দেয় কে? রঙিন কাগজে ছাপা হয়। নিরানব্বই পার্সেন্ট সাংবাদিক ভালো। কিন্তু আমাদের মধ্যেও যেরকম চোরচুট্টা আছে উনাদের মধ্যেও এরকম আছেন। সব জায়গায়ই আছে।’
সমাবেশে শামীম ওসমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল, অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূইয়া, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, চন্দন শীলসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।