‘কর্মকর্তার চড়ে’ কান ফাটল শিক্ষকের
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুর সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হামিদুল হকের বিরুদ্ধে। চড়ের আঘাত নিয়ে দুই দফা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন কীর্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র কির্তনীয়া। চিকিৎসকরা বলছেন, চড়ের আঘাতে ওই প্রধান শিক্ষকের কানের পর্দা ফেটে গেছে।
শরীয়তপুর জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হামিদুল হক গত ৬ আগস্ট শরীয়তপুর সদরে যোগ দেন। তিনি গত ৩১ আগস্ট সদর উপজেলার বিনোদপুর অঞ্চলের সাতটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় কীর্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কার্তিক চন্দ্রের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষককে কার্তিক চন্দ্রের বাঁ কানে চড় মারেন। উপস্থিত শিক্ষকরা তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘চিৎকার শুনে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে দেখি কার্তিক চন্দ্র কির্তনীয়া কান ধরে কান্না করছেন।’
চিকিৎসার জন্য ওই দিন বিকেলে কার্তিক চন্দ্র শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। কার্তিক দাবি করেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে পরের দিন সদর হাসপাতাল থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনা জানিয়ে তিনি গত ৩ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেন।
কার্তিক জানান, কানের ব্যথা বাড়লে গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানেও ওই শিক্ষা কর্মকর্তার লোকজন গিয়ে তাঁকে ভয় দেখান। ভয়ে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগের চিকিৎসক দেবব্রত রায় বলেন, ‘আঘাতজনিত কারণে কার্তিকের কানের পর্দা ফেটে গেছে।’
শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র বলেন, ‘তিনি (হামিদুল হক) অন্যায় ভাবে আমাকে মেরেছেন। কানে চড় দেওয়ার ফলে কানের পর্দা ফেটে গেছে। যে হাসপাতালে ভর্তি হই সেখানেই মানুষ পাঠিয়ে আমাকে ভয় দেখানো হয়। ভয়ে কোথাও চিকিৎসাও নিতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে কিছু মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করার জন্য কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। চিকিৎসা শেষে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে গিয়েছিলাম। আমাকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি।’
সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হামিদুল হক বলেন, ‘আমি কোনো শিক্ষককে মারধর করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। বরং ওই শিক্ষক ঘটনার দিন আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘হামিদুল হক শিক্ষককে মারধর করেছেন— এমন কোনো প্রমান আমরা পাইনি। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির অভিযোগে ওই প্রধান শিক্ষককে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। প্রশাসনিক কারণে তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তির কাগজ পত্র চাওয়া হয়েছে।’
হয়রানির শেষ নেই
মারধর করার আটদিন পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই প্রধান শিক্ষক কার্তিকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের বিষয়ে কৈফিয়ত চেয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী ওই প্রধানশিক্ষকের পৈত্রিক সম্পত্তির দলিল ও নকলের মূল কপি এবং সকল সার্টিফিকেটের মূল কপি সাতদিনের মধ্যে দাখিল করার জন্য পত্র দিয়েছেন।