বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবি, বিয়ের বাড়িতে আহাজারি

চাচাতো বোনের বিয়েতে আসার আগেই রাজধানীর সদরঘাটে সুরুভি লঞ্চের ধাক্কায় একই পরিবারের সাতজন নিয়ে ডুবে যায় নৌকা। একজন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হয় নারী ও শিশুসহ ছয়জন। শুক্রবার ও শনিবার পাঁচজনের মরদেহ বুড়িগঙ্গা নদী থেকে উদ্ধার হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে শাহিদা নামের এক গৃহবধূ।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবনিয়া গ্রামের কামাল চোকদারের মেয়ে খাদিজা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল নিহত স্বজনদের। অনুষ্ঠানে আসার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বোন জামসেদা বেগম, তাঁর স্বামী দেলোয়ার হোসেন, সাত মাস বয়সী শিশু ছেলে জোনায়েদকে নিয়ে। সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন চাচাতো ভাই শাহজালাল চোকদার, তাঁর স্ত্রী শাহিদা বেগম, তাঁদের দুই সন্তান মিম (৮) ও মাহি (৬)। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বহনকারী নৌকাটি লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা নদীতে তলিয়ে যায়। এ সময় আহত অবস্থায় শাহজালাল চোকদারকে উদ্ধার করা হলেও বাকি ছয়জন নদীতে তলিয়ে যায়।
বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের লাশ আজ শনিবার উদ্ধার করা হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা
শুক্রবার জামসেদার মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার হলে গ্রামে এনে দাফন সম্পন্ন করা হয়। আজ নদী থেকে আরো চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো তাদের লাশের অপেক্ষায় রয়েছে স্বজনেরা। নিখোঁজ রয়েছে শাহিদা নামের আরো একজন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে খাদিজার বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে শোক ছড়িয়ে পড়ে। বিয়ে বাড়িতে কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। একদিনের ব্যবধানে পরপাড়ে পাড়ি দেয় ছয়জন।
শনিবার দুপুরে বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছিলেন জামসেদার বাবা কামাল চোকদার। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার মারে আর নানু ভাইরে আইন্না দে। অগো কইছিলাম রাইতের লঞ্চে আহিস না। একদিন আগে দিনে আয়। আমার সব শেষ হইয়া গেল।’
বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবিতে নিহত সাত মাস বয়সী শিশু জোনায়েদের লাশ নিয়ে নৌবাহিনীর ডুবুরিরা। ছবি : স্টার মেইল
শাহজালাল চোকদারের বাবা মহসিন চোকদার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসার হওয়ায় শিশু বয়সেই ছেলেকে কাজে ঢাকায় পাঠাই। সেখানে দর্জি কাজ শিখছিল। ভালোই আয়-রোজগার করত। তার পাঠানো টাকায় আমরা চলতাম। বৌ আর নাতনি দুইটার খোঁজ পাচ্ছি না। ছেলেটার দুইটা পা বিচ্ছিন্ন হইয়া গেছে। আল্লাহ কেন এত বড় বিপদ দিলা আমারে।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহম্মেদ বলেন, নৌ-দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয়জন নিখোঁজ থাকার বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সরকারি সংস্থাগুলো নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করছে। ওই পরিবারগুলোর পাশে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক থাকবে।