শিশুটির এখন কী হবে?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/10/14/photo-1444844247.jpg)
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নে ‘ধর্ষণের শিকার’ এক গৃহবধূ মঙ্গলবার ভোরে একটি ছেলে সন্তানের দিয়েছেন। ওই সন্তানকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে গ্রামের লোকজন ওই গৃহবধূর ঘর ভাঙচুর করেছে। একপর্যায়ে এক প্রতিবেশী নবজাতককে কেড়ে নিয়ে অন্যের হাতে তুলে দেয়।
বুধবার দুপুরে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে মাদারীপুর মডেল থানা পুলিশ। আটক করে তিনজনকে। গৃহবধূ সন্তান ফিরে পেয়ে খুশি হলেও ফের হামলা ও সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে তিনি শঙ্কায় পড়েছেন।
পুলিশ, স্থানীয় লোকজন, পারিবারিক ও ওই গৃহবধূ সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের ওই গৃহবধূর সঙ্গে একই গ্রামের একজনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সেই ঘরে তিনজন ছেলে সন্তান হয়। স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় ওই গৃহবধূ সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তিনি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সন্তানদের খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ জোগান।
মাদারীপুর মডেল থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ মাস আগে ওই গৃহবধূকে ঘরে একা পেয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা লঞ্চের কুলি শাহ আলম মাতুব্বর ধর্ষণ করেন। লোকলজ্জার ভয়ে গৃহবধূ ঘটনাটি চেপে যান। পরে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। গৃহবধূর শারীরিক পরিবর্তন এলে ঘটনাটি জানাজানি হয়। সন্তান জন্মানোর প্রায় তিন মাস আগে পাঁচখোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান টুকু ম্যোলা, সদস্য তাহেরসহ স্থানীয় লোকজন নিয়ে ওই গ্রামের রহিম হাওলাদারের বাড়িতে সালিশ বসে।
পাঁচখোলা ইউপি চেয়ারম্যান টুকু মোল্যা বলেন, সালিশে শাহ আলম ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেন। ওই সময় শাহ আলম বলেছিলেন, সন্তান জন্মানোর পর রক্ত পরীক্ষা করে যদি প্রমাণিত হয় এই সন্তান তাঁর, তবে তিনি এই সন্তানের দায়ভার নেবেন। সালিশেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে মঙ্গলবার ভোরে বাবার বাড়িতে থাকাবস্থায় ওই গৃহবধূ একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন। এই ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শাহ আলম এলাকাবাসীকে ওই নবজাতককে অবৈধ সন্তান বলে উসকে দেন। স্থানীয় লোকজন এসে ওই গৃহবধূর ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করে। এ সময় প্রতিবেশী সিকিম আলীর স্ত্রী চন্দনী বেগম ওই গৃহবধূর কোল থেকে সন্তান কেড়ে নিয়ে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে দেন বলে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে।
গৃহবধূ নিজের সন্তানকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে না পেয়ে আজ বুধবার সকালে মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কনাকে জানান। কর্মকর্তা মাদারীপুর মডেল থানায় জানালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল মোর্শেদ তাৎক্ষণিক ফোর্স পাঠিয়ে চন্দনী বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তাঁর কথা মতো পুলিশ একই উপজেলার মস্তফাপুরের একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে ওই গৃহবধূর কোলে ফিরিয়ে দেয়।
পুলিশ এই ঘটনায় চন্দনী বেগম ও তাঁর ছেলে বাবলু গৌড়াসহ তিনজনকে আটক করেছে।
ওই গৃহবধূ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘১০ মাস এই সন্তান পেটে ধরেছি। খেয়ে না খেয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে, অনেক কষ্ট করে সন্তান পেটে বড় করেছি। কিন্তু সেই সন্তান জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষক শাহ আলম আশপাশের লোকজনকে অবৈধ সন্তান বলে উসকে দেয়। এ সময় প্রতিবেশী চন্দনী বেগম আমার কোল থেকে আমার সন্তানকে ছিনিয়ে নেয়। আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও পুলিশের আন্তরিকতায় আমার সন্তানকে আবার আমার বুকে ফিরে পেয়েছি।’
গৃহবধূ বিমর্ষ কণ্ঠে বলেন, ‘তবে আমি এই সন্তানের পিতৃপরিচয় কী দেব। ও বড় হলে কোন পরিচয়ে বড় হবে। আমি জানি না। এই শিশুটি কোনো দোষ করেনি। আমি এর পিতৃপরিচয় চাই এবং অপরাধীদের শাস্তি চাই।’
গৃহবধূ কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন, ‘এই সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলে আবার এই সন্তান চুরি হয়ে যেতে পারে। এমনকি আমার ওপর অত্যাচারও হতে পারে। আমি এখন কী করব। কোথায় যাব। জানি না।’
মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কনা বলেন, ‘মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে অন্যত্র দেওয়া অন্যায়, অপরাধ। তাই এই ঘটনা শোনামাত্রই মডেল থানার ওসিকে জানানো হয়। তিনিই দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়েছে। এখন এই নিষ্পাপ শিশুটির পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্ষকের শাস্তির ব্যবস্থা করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
মাদারীপুর মডেল থানার ওসি মো. জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত শাহ আলমের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।