শিল্পী ও সাংবাদিক সফিউল আলম রাজা আর নেই

ভাওয়াইয়া শিল্পী ও সাংবাদিক সফিউল আলম রাজা (৪৮) আর নেই। আজ রোববার দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
আজ রোববার মিরপুরের পল্লবী এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠিত গানের স্কুলের একটি কক্ষ থেকে রাজার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পল্লবীর সাড়ে ১১ নম্বরের একটি বাসায় ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠিত গানের স্কুল ‘কলতান সাংস্কৃতিক একাডেমি।’ ওই স্কুলের ওপরের তলার একটি কক্ষে তাঁর বিশ্রামাগার আছে। সেখান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ।
রাজা ভাওয়াইয়া গানের দল প্রতিষ্ঠা করেন ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে প্রথম ওই সংগঠনের একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দলের সর্ব প্রথম শিক্ষার্থী ছিলেন জাকের হোসেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুপুর পৌনে ২টার দিকে স্কুলের ওই কক্ষে নক করা হয়। কিন্তু ভেতর থেকে খুলেননি রাজা ভাই। তারপর বাসার মালিককে জানানো হয়।’
জাকের হোসেন বলেন, ‘এরপর বাড়ির মালিক ভাইয়ের (রাজা) মেয়েকে ফোন করেন। মেয়ে আসেন দুপুর আড়াইটার দিকে। এরপর দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। ঢুকে দেখতে পান রাজা ভাই শুয়ে আছেন ভালোভাবে। এক হাত বুকের উপর, অন্য হাত বালিশের উপর। এতে আমরা ধারণা করছি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্য বরণ করেছেন।’
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরানুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা দুপুর ২টার দিকে খবর পাই। ঘটনাস্থল থেকে আড়াইটার দিকে তার লাশ উদ্ধার করি। দেখে মনে হয়েছে, স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা এটি। তবুও আমরা তদন্ত করে দেখব।’
ভাওয়াইয়া গানের এই শিল্পীর জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায়। সফিউল আলম রাজা বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত ‘বিশেষ’ ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘প্রথম’ শ্রেণির শিল্পী। এ ছাড়া তিনি দেশের সব কয়টি চ্যানেলে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করেন।
দীর্ঘ ২৪ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময় দৈনিক যুগান্তরে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতায়ও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
পেশাগত জীবনে রাজা সাংবাদিকতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার, ডেমোক্রেসি ওয়াচ হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড, ইউনেস্কো ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
শিল্পী জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বেঙ্গল বিকাশ প্রতিভা অন্বেষণে লোকসঙ্গীতে (ভাওয়াইয়া গান নিয়ে) সারা দেশে শ্রেষ্ঠমান বিজয়ী নির্বাচিত হন রাজা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে রাজার একটি মিক্সড অ্যালবাম এবং ভায়োলিন মিডিয়া থেকে একক অ্যালবাম ‘কবর দেখিয়া যান’ প্রকাশিত হয়েছে। ভাওয়াইয়ার প্রচার-প্রসারে রাজা ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভাওয়াইয়া গানের দল’।
২০১১ সালে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠা করেন গানের স্কুল। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘উত্তরের সুর’-এ প্লেব্যাক করেছেন।