রাঙামাটিতে ছাত্রলীগ-পিসিপি সংঘর্ষ, কলেজ বন্ধ
রাঙামাটি সরকারি কলেজে আজ শনিবার ছাত্রলীগ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই সময়ে বাঙালি মালিকানাধীন সাতটি দোকান ভাঙচুর ও দোকানিদের মারধর করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় দুটি মোটরসাইকেল। এই ঘটনায় কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
urgentPhoto
সংঘর্ষে চলাকালে পিসিপিকর্মীদের হামলায় ছাত্রলীগকর্মী অর্ণব ত্রিপুরা, কলেজ গেটের আকতার স্টোরের আকতার, শাহ আলম স্টোরের শাহ আলম, মেহমান স্টোরের আলম, নিউ শাহী ভাতঘরের কর্মচারী মোমিনুল, শুভেচ্ছা স্টোরের রাসেল, পাহাড়িকা কাউন্টারের হাসান ও ইউসুফ নামের এক পান দোকানি এবং এনথন চাকমা ও ইকবাল নামের দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাঙামাটি সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ ইমতিয়াজ রিয়াদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের মিছিল শেষ হয়। মিছিল শেষে কলেজের ক্যান্টিনে যাওয়ার সময় পিসিপি-কর্মীরা কলেজের ছাত্র ও রাঙামাটি পৌর ছাত্রলীগের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক অর্ণব ত্রিপুরার ওপর হামলা চালায় এবং তাঁকে মারধর করে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। তারা ক্যাম্পাসের বাইরের দোকানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে আমাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।’
আহত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী অর্ণব ত্রিপুরা অভিযোগ করেন, ক্যান্টিনে যাওয়ার সময় পিসিপিকর্মীরা তাঁর কাছে ছাত্রলীগের মিছিলে যাওয়ার কারণ জানতে চায়। তিনি জানান, সংগঠনের কর্মী হওয়ায় তিনি ছাত্রলীগের মিছিলে গেছেন। এই কথা বলার পর পিসিপি কর্মীরা তাঁকে মারধর করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অর্ণব ত্রিপুরার ওপর হামলার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এগিয়ে যান। তখন পিসিপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পিসিপির নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কলেজ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর পিসিপির নেতা-কর্মীরা কলেজ গেটে অবস্থিত দোকানপাট ভাঙচুর ও দোকানিদের মারধর শুরু করে। দোকানের টাকা ও মালামাল লুট করে। পুড়িয়ে দেয় দুটি মোটরসাইকেল। কলেজের বাইরে দুই পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবু পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ ব্যাপারে পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘আমাদের কিছু কর্মী কলেজ ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগকর্মীরা আমাদের কর্মীদের ওপর বিনা উসকানিতে ইট নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।’
তবে জেলা পিসিপির সাধারণ সম্পাদক রিন্টু চাকমা বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা এক পাহাড়ি শিক্ষার্থীর সঙ্গে খেলা নিয়ে কথা বলছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগ ভেবেছে আমরা তাঁকে মারধর করছি। তাই তারা হৈ হুল্লোড় করে আমাদের ওপর হামলা করেন।’
দোকান ভাঙচুর বা দোকানিদের মারধরের ঘটনার সঙ্গে পিসিপি জড়িত নয় বলে রিন্টু চাকমা দাবি করেন।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান কর্মচারী মোমিনুল জানান, কলেজে কী নিয়ে মারামারি হয়েছে তা তাঁরা বলতে পারেন না। পাহাড়ি ছেলেরা অতর্কিত তাঁদের দোকানে এসে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। যাওয়ার সময় আগুন ধরিয়ে দেয়।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আছে।
ঘটনাস্থল পরিদির্শন করে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘এই মুহূর্তে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি সবাই ঘটনাস্থলে আছে। আশা করি, আর কোনো সমস্যা হবে না।’ তিনি কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।
রাঙামাটি সরকারি কলেজ বন্ধ ঘোষণা : এদিকে সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য রাঙামাটি সরকারি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কলেজের অধ্যক্ষ বাঞ্ছিতা চাকমা জানান, কলেজের ক্লাস বন্ধ থাকলেও ভর্তি ও নিয়মিত পরীক্ষা চলবে।
ব্যবসায়ীদের কর্মসূচি : এদিকে দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের জন্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদকে দায়ী করে কাল রোববার সারা দিন কলেজ গেট এলাকায় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন টিটু। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে কাল সকাল ১০টায় কলেজ গেট বটতলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের বিক্ষোভ : ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদের কাল সকাল ১০টায় রাঙামাটি শহরের পৌর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ।