জমে উঠেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/10/19/photo-1445193624.jpg)
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে জমে উঠেছে ৫০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট। পুরো বাংলাদেশে এটিই একমাত্র ঢাকের হাট বলে পরিচিত। তবে এই হাটে কোনো বাদ্যযন্ত্র কেনাবেচা হয় না। এই হাট আসলে বাদক দল বেছে নেওয়ার হাট। টাকার বিনিময়ে পছন্দ অনুযায়ী বাদক দল ভাড়া নেওয়া যায় এখান থেকে।
কিশোরগঞ্জের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ের আমলে প্রথম এখানে ঢাকের হাট বসে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্মিত পূজামণ্ডপে বাদ্যবাজনা বাজানোর রীতি থেকেই এই ঢাকের হাটের সূচনা। সেই থেকে প্রতিবছরই এখানে ঢাকের হাট বসছে।
প্রতিবছরের মত এবারও দুর্গাপুজা উপলক্ষে গতকালে শনিবার বিকেল থেকে কটিয়াদী উপজেলা সদরের পুরান বাজারে শুরু হয়েছে ঢাকের হাট। এই হাটে বাদ্য-বাজনা নিয়ে বাদক দল যেমন হাজির হন তেমনি পূজা উপলক্ষে নিজ নিজ মণ্ডপের আয়োজকরাও বাদক দলের খোঁজে হাজির হন এখানে।
হাট উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় চার শতাধিক বাদক নানা ধরনের বাদ্য-বাজনা নিয়ে হাজির হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে থাকা বাদ্য-বাজনার মধ্যে রয়েছে ঢাক, ঢোল, ড্রাম, করতাল, খঞ্জনা, সানাই, কর্নেট, কাঁশি, মঞ্জরি, ঝনঝনি ও নানা জাতের বাঁশিসহ হরেক ধরনের সামগ্রী। নিজ নিজ মণ্ডপে বাদ্য বাজানোর জন্য তাই সনাতন ধর্মাবলম্বী আয়োজকরাও বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসেন কটিয়াদীর ঢাকের হাটে।
স্বাধীনতার পর থেকে হাটে আগত বাদক দলের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পূজার আয়োজকরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন বাদকদের বাজনা। পারিশ্রমিকের বনি-বনা হলে এখান থেকে বাদকরা দল নিয়ে চলে যাবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। বাদক দল থাকা-খাওয়া ছাড়াই দশমী পর্যন্ত সত্তর/আশি হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক হাঁকছেন।
এই হাটে আগত বাদক দলের অনেকেই বংশ পরম্পরায় বহু বছর ধরে এই হাটে আসছেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার ঠিক আগ মুহূর্তে এখন সকাল থেকে রাত অবধি কটিয়াদীর ঢাকের হাটে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। বাদক দলের খোঁজে আসা পূজা আয়োজকদের মন জয় করতে চলছে অবিরাম প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। তাই সর্বোচ্চ দক্ষতার মাধ্যমে নিজ নিজ বাদ্য বাজানোর মাধ্যমে দক্ষতা প্রমাণের কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন বাদক দলের সদস্যরা। এর ফলে একই সাথে বেজে চলছে ঢাক, ঢোল, ড্রাম, করতাল, খঞ্জনা, কর্নেট, কাশি, ঝনঝনি ও নানা জাতের বাঁশি। তিন শতাধিক বাদকদলের একত্রে বাদ্য পরিবেশনার সুর মুর্চ্ছনায় মুখরিত হয়ে পড়েছে এখানকার পরিবেশ। এই সুযোগে স্থানীয় বাসিন্দারাও বিনা পয়সায় বাদ্য-বাজনার সুরধ্বনি উপভোগ করতে ভিড় জমাচ্ছেন ঢাকের হাটে।