ছাত্রলীগের বড় ভাইকে পেটালেন ছোট ভাইরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগের এক বড় ভাইকে পিটিয়ে জখম করেছে সংগঠনের ছোট ভাইরা। গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর এই ঘটনা ঘটে।
এই হামলায় জড়িত ছাত্রলীগের ৯ নেতা-কর্মীর বিচার চেয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ।
আজ বুধবার বিকেলে উপাচার্য বরাবর এ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। উপাচার্যের পক্ষে প্রক্টর তপন কুমার সাহা লিখিত অভিযোগটি গ্রহণ করেন।
আহত শিক্ষার্থীর নাম আব্দুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। থাকেন মীর মশাররফ হোসেন হলের বি-ব্লকের ২৬০ নম্বর কক্ষে।
আব্দুল্লাহ আল-মামুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুর রহিম জুয়েলের নেতৃত্বে ৮-৯ জন ছাত্রলীগকর্মী মঙ্গলবার রাত ১২টার পর তাঁর কক্ষে এসে তাঁকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা লোহার রড, পাইপ ও রামদা নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়।
হামলার কারণ জানতে চাইলে মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পরবর্তী কমিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন এটা আঁচ করতে পেরে সংগঠনের প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর ওপর হামলা করতে পারে।
হামলার পরপর হলের অন্য শিক্ষার্থীরা মামুনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। চিকিৎসা শেষে আজ বুধবার সকালে হাসপাতাল থেকে হলে ফেরেন মামুন। মামুনের হাত ও পিঠে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে।
মামুনের ওপর হামলার বিচার চেয়ে আজ উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগে সই করেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ সোহাগ, সহসভাপতি রাহাত করিম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটু ও উপসমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক মো. বশিরুল হক।
এতে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুর রহিম জুয়েল (জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, ৪১তম ব্যাচ), রবিউল ইসলাম (নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ), বনি আলম (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ৪১তম ব্যাচ), মো. বখতিয়ার রিফাত (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ৪১তম ব্যাচ), দেবাশীষ বিশ্বাস (দর্শন বিভাগ, ৪১তম ব্যাচ), সৈয়দ লায়েব আলী (দর্শন বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ), আদনান সৌম্য (ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ), আজমাইন ফায়েক স্বপ্নীল (দর্শন, ৪৩তম ব্যাচ) ও আবু হাসান (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ)।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘এরা (হামলাকারীরা) চিহ্নিত সন্ত্রাসী, একাধিক মামলার আসামি এবং চাঁদাবাজির মতো বহু বিষয়ে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আমরা মীর মশাররফ হোসেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতি দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং হলের নিরাপত্তা ও নিরাপদে হলে অবস্থানের নিশ্চয়তা চাই।’
এদিকে অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুর রহিম জুয়েলকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগকর্মী রবিউল ইসলাম হামলার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আসলে হামলার মতো কিছু ঘটে নাই। মামুন ভাই ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং তাঁদের র্যাগ উৎসবও শেষ। আমরা তাঁর রুমে গিয়ে তাঁকে হল ছেড়ে চলে যেতে বলি। তাঁর তো হলে থাকার কোনো বৈধতা নেই। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এতে তিনি সামান্য আহত হয়ে থাকতে পারেন। আমি ও আমার সঙ্গে থাকা একজনও আহত হয়েছে তখন।’
এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা ছাত্রলীগের কোনো কোন্দল না। এটা হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়টাকে আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সমাধান করব।’
এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর তপন কুমার সাহা।