সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য সম্পন্ন

সবুজবাগে শ্রী-শ্রী বরদেশ্বরী মহা শ্মশানে সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সন্ধা ৭টায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এর আগে বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীর মরদেহ বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত । হাজারো মানুষ প্রিয় শিল্পীকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানান। এফডিসিতে সুবীর নন্দীর মরদেহ আনা হয় বেলা ১টায়। সেই সময় মাইকে বাজতে থাকে সুবীর নন্দীর গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলো।
এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব অডিটোরিয়ামের সামনে সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চলচ্চিত্রের সবগুলো সংগঠনের সদস্যরাসহ বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরা।
তাঁরা হলেন, নায়ক আলমগীর, ওমর সানী, নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম খোকন, শাহ আলম কিরণ, এস এ হক অলিক, নায়ক জায়েদ খান, নায়িকা অরুণা বিশ্বাস, জেসমিন প্রমুখ। এ ছাড়া নাট্য পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টসর গিল্ডের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সুবীর নন্দীকে স্মরণ করে নায়ক ওমর সানী বলেন, ‘কিংবদন্তীর মৃত্যু নেই। সুবীর নন্দী তাঁর কর্ম নিয়ে বেঁচে থাকবেন অনেকদিন। আজ থেকে ৫০ বছর পর তাঁকে নিয়ে গবেষণাও হবে।’
নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘সুবীর নন্দীর কন্ঠে স্বতন্ত্রতা ছিল। তাঁর গান বাজলে আশে পাশের কেউ তাঁকে না দেখেই বলতে পারত এটা সুবীর নন্দীর কন্ঠ। কিছু চলচ্চিত্রে সুবীর নন্দীর গান ছাড়া হতোই না। সুবীর নন্দীর চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর অভাব কখনো পূরণ হবে না।’
সবুজবাগে শ্রী-শ্রী বরদেশ্বরী মহা শ্মশানে সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: মোহাম্মদ ইব্রাহিম
এফডিসি থেকে সুবীর নন্দীর মরদেহ চ্যানেল আইয়ের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর নেওয়া হয় রামকৃষ্ণ মিশনে। সেখান থেকে সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমন্দির ও শ্মশানে সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী বাংলাদেশ সময় গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আজ সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে সুবীর নন্দীর মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছে। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর ঢাকার গ্রিনরোডের বাসায়। সেখান থেকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেলা ১১টায় তাঁর মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
এর আগে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল তাঁর। ১৮ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় সুবীর নন্দীকে।
বাংলাদেশে সুবীর নন্দীর চিকিৎসার বিষয়টি সমন্বয় করছিলেন অধ্যাপক সামন্তলাল সেন। তিনি বলেন, ‘বারবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাঁর, সেইসঙ্গে সুবীর নন্দীর মাল্টিপল অর্গান ফেইলিউর হচ্ছিল।’
সংগীতে অবদানের জন্য এ বছরই সুবীর নন্দীকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার। বেতার, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকে তাঁর অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের জন্য চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।
দেশের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পীর ১৯৮১ সালে প্রথম একক অ্যালবাম সুবীর নন্দীর গান প্রকাশ হয়। ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে-ব্যাক করেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছরের সংগীত ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। সংগীতে অবদানের জন্য এ বছর তিনি পান দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক।
সুবীর নন্দীর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো—ও আমার উড়াল পঙ্খি রে, কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়, চাঁদে কলঙ্ক আছে যেমন, বধূ তোমার আমার এই যে পিরিতি, একটা ছিল সোনার কইন্যা, কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো, আমি বৃষ্টির কাছ থেকে, দিন যায় কথা থাকে, আশা ছিল মনে মনে ইত্যাদি।