নরসিংদীতে ফুলনের জন্য বাঁধভাঙা আর্তনাদ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/06/26/photo-1561570076.jpg)
দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে নরসিংদীর কলেজছাত্রী ফুলন রানী বর্মণের (২২) মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। বুধবার তাঁর মরদেহ নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহল্লায় পৌঁছালে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাঁধভাঙা আর্তনাদ আর স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে গোটা পরিবেশ। ফুলনের মরদেহ এক নজর দেখতে ভিড় জমায় হাজারো মানুষ।
১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মারা যান ফুলন। তিনি নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুর মহল্লার যোগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। গত বছর নরসিংদীর উদয়ন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। তবে এরপর আর কোথাও ভর্তি হননি।
গত ১৩ জুন রাতে বাড়ির কাছেই তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। রাতেই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তাঁর শরীরের ২০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল।
বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ফুলনের মা অঞ্জলি রানী বর্মণ, তাঁর ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি করছেন। মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় ফুলনের মরদেহ নরসিংদীর বীরপুরে তাঁর নিজ বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। ফুলনের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীর আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। শোক আর কান্নার রোল পড়ে এলাকাজুড়ে। নিহত ফুলনকে একনজর দেখার জন্য এলাকাবাসী ও তার সহপাঠীরা ভিড় জমায় বাড়ির আঙিনায়। তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল, ১৩ জুন রাতে ফুলন এক আত্মীয়ের সঙ্গে দোকানে কেক কিনতে যান। কেক নিয়ে তিনি একাই বাসায় ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে কয়েকজন দুর্বৃত্ত হাত-মুখ চেপে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে ফুলনের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাঁকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় ফুলনের বাবা যোগেন্দ্র বর্মণ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে। উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল গাফফারের নেতৃত্বে মামলাটির তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন সময়ে সঞ্জীব, রাজু সূত্রধর, ভবতোষ ও আনন্দ বর্মণকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে ফুলনের ফুফাতো ভাই (পিসির ছেলে) হচ্ছে ভবতোষ। বাকিরা ভবতোষের বন্ধু।
গত শুক্রবার বিকেলে এ মামলার আসামি রাজু নরসিংদীর বিচারিক হাকিম শারমিন আক্তার পিংকীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তার পরই এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন দাবি করেন, ‘ফুলনের বাবা যোগেন্দ্রর সঙ্গে প্রতিবেশী সুখলাল ও হীরালালের বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সালিশও হয়েছে। ঘটনার দুদিন আগে ১১ জুন ভবতোষ ও তাঁর মামির (ফুলনের মা) সঙ্গে প্রতিবেশী সুখলালের ঝগড়া হয়।’
এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ফুলনের মা বলেন, ‘এখানে থাকব না। দরকার হলে জমি বিক্রি করে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যাব।’ ভবতোষও তখন সুখলালকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন। মূলত এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ভবতোষের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজু ও আনন্দ। ঘটনার দিন ভবতোষ, রাজু ও আনন্দ শহরের বীরপুর রেললাইনে বসে ফুলনের গায়ে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেদিন রাতে দোকান থেকে ফেরার পথে ফুলনের মাথা ও শরীরে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন দেওয়া হয়। তারপর ভবতোষ ও আনন্দ একদিকে এবং রাজু অন্যদিকে চলে যান।’