মানসিক চাপে মিন্নি : চিকিৎসক

‘মিন্নি তেমন কোনো গুরুতর অসুস্থ নয়। একটু শারীরিক ব্যথা-বেদনা থাকতে পারে। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে, তাই মানসিকভাবে একটু চাপে আছে। ভয়ের কিছু নেই, দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। তিনি অনেক ভালো আছেন।’
আজ শুক্রবার সকালে জেলহাজতে মিন্নির চিকিৎসায় যাওয়া বরগুনা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি মেডিকেল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান এমনটাই দাবি করেছেন।
মিন্নিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘না তেমন কোনো কিছু দেখা যায়নি। তা ছাড়া মিন্নিও তেমন কিছুই বলেননি। তবে তাঁর ঘুম কম হচ্ছে। সকালবেলা যেহেতু জেলখানার কিছু নিয়ম-কানুন আছে, সেহেতু সকালে তিনি ঘুমাতে পারেন না। আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি, উনি যতটুকু রেস্ট নিতে চান, তিনি যেন তা নিতে পারেন। জেল কর্তৃপক্ষও সেটা দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে মহিলা ডাক্তারও ছিলেন। মিন্নির পরিবারের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য মিন্নির পরিবার তাঁকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এর জবাবে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে তেমনটি মনে হয়নি।’
এদিকে গত বুধবার বরগুনা জেলা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম দাবি করেছিলেন, মিন্নি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি বলেছিলেন, ‘মিন্নি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। মিন্নি জানিয়েছেন, তাঁকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে এবং নির্যাতন করা হয়েছে। তাঁর শরীরে এখনো ব্যথা রয়েছে। মিন্নির চিকিৎসার দরকার হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে জেলার জানিয়েছেন।’
মিন্নির বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আরো বলেন, ‘মিন্নির শরীরে ব্যথা আছে। তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। এ ছাড়া মিন্নি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে মিন্নি যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তা পুলিশ শিখিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই মিন্নি ওই জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চাচ্ছেন। আমি মিন্নিকে ওই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিয়েছি।’
গত ১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওইদিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৩ জন রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া এ মামলার দুজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছেন। আর এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি।
খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর আসামি। পরে তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।