আবির হত্যা : ৫ মাদ্রাসাছাত্র গ্রেপ্তার, ৩ জনের স্বীকারোক্তি

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা নূরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হোসাইন (১১) হত্যা রহস্য উন্মোচন করার দাবি করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় জড়িত ওই মাদ্রাসার পাঁচ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ ছাত্র হলো সদর উপজেলার হানুরবারাদি গ্রামের মো. আনিসুজ্জামান (১৮), টেইপুর গ্রামের ছালিমির হোসেন (১৩), আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের আবু হানিফ রাতুল (১৩), আকুন্দবাড়িয়া গ্রামের আব্দুন নূর (১২) ও বলদিয়া গ্রামের মুনায়েম হোসেন (১৬)। এদের গত রোববার ও সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে আনিসুজ্জামান, ছালিমির হোসেন ও আবু হানিফ রাতুল জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক সাজেদুর রহমানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা উল্লেখিত পাঁচজনের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
গত ২৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কয়রাডাঙ্গা নূরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হোসাইনের মস্তকবিহীন লাশ মাদ্রাসার পেছনের একটি আমবাগান থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের মা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের দুবাই প্রবাসী আলী হোসেনের স্ত্রী গোলাপী বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা পরের দিন মাদ্রাসার কাছাকাছি একটি পুকুর থেকে আবিরের মাথা উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় পুলিশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু হানিফ ও শিক্ষক তামিম হোসাইনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার দুজনকে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
২৫ জুলাই চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে খুব কৌশলে আবিরকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি দেশে চলমান ছেলেধরা গুজবের খাতে প্রবাহিত করতেই তার শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ রকম কোনো গুজবে কান না দিতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মাহবুবুর রহমান আরো জানান, সদর হাসপাতালে আবিরের মরদেহ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ ও সোয়াব টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের পর খুনের প্রকৃত কারণ ও এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে জবানবন্দি দেওয়া ছালিমির ও আবু হানিফ রাতুল এবং তাদের সহযোগী মাদ্রাসাছাত্র আব্দুন নূর ও শিক্ষক তামিম হোসাইনের জামিনের জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করেন। জেলা ও দায়রা জজ মো. রবিউল ইসলাম শিক্ষকের জামিন নামঞ্জুর এবং তিন ছাত্রের জামিনের বিষয়ে আগামীকাল বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল খালেক আসামিদের গ্রেপ্তার করে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তোয়ালে উদ্ধারসহ প্রাথমিক স্বীকারোক্তি আদায় করেন।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সী জানান, গ্রেপ্তার পাঁচ ছাত্রকে আদালতের মাধ্যকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।