‘ঢাকা বিভাগ ছাড়ব না, ফরিদপুরে যাব না’
প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে যেতে চান না শরীয়তপুরের মানুষ। তারা আগের মতো ঢাকা বিভাগেই থাকতে চান। এই দাবিতে রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আজ শুক্রবার সকালে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আলোকিত শরীয়তপুর যুব সংঘ। তারা প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ থেকে শরীয়তপুর জেলার নাম প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
একই দাবিতে এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর শহরে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধন করে।
আজ আলোকিত শরীয়তপুর যুব সংঘের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শরীয়তপুরবাসীর প্রাণের দাবি, ঢাকা বিভাগ ছাড়ব না, ফরিদপুর বিভাগে যাব না’। শরীয়তপুর জেলার সর্বস্তরের মানুষ ঢাকা বিভাগ ছেড়ে ফরিদপুর বিভাগে না যাওয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শরীয়তপুরবাসীর আজ একটাই দাবি-ঢাকা বিভাগে ছিলাম, আছি এবং ঢাকা বিভাগেই থাকতে চাই।
অবস্থান কর্মসূচিতে আলোকিত শরীয়তপুর যুব সংঘের আহ্বায়ক ডা. আনোয়ার ফরাজী ইমন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযুগী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সমগ্র দেশের সঙ্গে বৃহত্তর ফরিদপুরেও লেগেছে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া। যার অংশ হিসেবে সমৃদ্ধির অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরকে বিভাগে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। জননেত্রীর এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’
আনোয়ার ফরাজী ইমন আরো বলেন, ‘সুদীর্ঘ কালব্যাপী ঢাকাকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও চিকিৎসার প্রয়োজনে অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে ও সহজেই আমরা ঢাকায় যাতায়াত করতে পারি। কেননা, শরীয়তপুর থেকে যেখানে ঢাকার দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার, সেখানে ফরিদপুরের দূরত্ব ১০৩ কিলোমিটার।
ডা. ফরাজী আরো বলেন, আজ প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে আমাদের এই দাবি যৌক্তিক এবং যথার্থ। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলাকে ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে বাদ দিয়ে ঢাকা বিভাগে রেখেছেন। তাই আপনার কাছে আমাদের প্রাণের দাবি, আমাদের এই দাবি মেনে নেবেন, এটাই শরীয়তপুরবাসীর প্রত্যাশা।’
আলোকিত শরীয়তপুর যুব সংঘের সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে বহুল প্রত্যাশিত এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থাপনা পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরুর পর থেকেই যেভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, তাতে শরীয়তপুর জেলা একটি আধুনিক এবং মডেল জেলায় পরিণত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। যার ফলে ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তে সব শ্রেণি-পেশার শরীয়তপুরবাসী হতাশ এবং মনঃক্ষুণ্ণ। সবার আজ একটাই দাবি, ঢাকা বিভাগে ছিলাম, আছি এবং ঢাকা বিভাগেই থাকতে চাই।’
মনিরুজ্জামান আরো বলেন, ‘শরীয়তপুর জেলাকে ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে এবং ক্ষেত্রবিশেষে চলমান উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। তাই প্রিয় জেলার সব জনসাধারণের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ থেকে শরীয়তপুর জেলার নাম প্রত্যাহার করে ঢাকা বিভাগেই রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য দেন বি এম শওকত আলী, ইঞ্জিনিয়ার হারিসুজ্জামান, আফজালুর রহমান সিকদার, অধ্যাপক ইউনুস ঢালী, মনির এইচ ফরাজী হিমেল, আসাদুজ্জামান খোকন, অ্যাডভোকেট লিটন মিয়া, মো. উজ্জ্বল হোসাইন, বি এম আবু হানিফ, মো. আমিনুল ইসলাম বুলু, এম এ হান্নান, মো. আবুল হাসেম, মাহমুদ হাসান সুমন প্রমুখ।
কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন মো. নাজমুল হোসেন, আবদুস সালাম, আবুল কালাম রতন, আবদুস সালাম, আবুল হাসেম, মো. খলিল শেখ, সাইফুল ইসলাম, বাচ্চু বেপারী, মো. রতন, মো. আবদুর রহিমসহ শরীয়তপুরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।
শরীয়তপুরে মানববন্ধন : জেলা প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ শিশির জানান, শরীয়তপুর জেলাকে প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগের সঙ্গে যুক্ত না করে ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত জেলা শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। জাগো শরীয়তপুর নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে শরীয়তপুর বণিক সমিতি, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। মানববন্ধন থেকে শরীয়তপুর জেলাকে ঢাকা বিভাগেই অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি জানানো হয়।