‘ছেলের সঙ্গে নতুন জামা-ব্যাগ কবরে রেখে আসব’

নিহারের (৭) লাশ যখন অ্যাম্বুলেন্সে করে মিরপুরের রূপনগরের ১১ নম্বর সড়কের ঝিলপাড় বস্তিতে নেওয়া হয় তখন পুরো এলাকা কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নায় ভারি উঠে পরিবেশ। অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমেই নিহারের বাবা সারোয়ার হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠেন, ‘আমার ছেলে স্কুল ব্যাগ আর নতুন জামা-কাপড় অহন আমি কী করমু?’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিহারের লাশ ওই বস্তিতে নেওয়া হয়। ওই সময় সেখানে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
গতকাল বুধবার বিকেলে বেলুনের গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত হয় নিহার। বের হয়ে যায় তার নাঁড়ি-ভুঁড়ি। এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হলে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসক।
বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে রূপনগর আবাসিক কেন্দ্রীয় জামে মসজিতে নিহারের জানাজা হয়। জানাজায় অংশ নেয় বস্তির অনেক মানুষ। মসজিদের ইমাম মাওলানা ফারুক আহমেদ জানাজা পড়ান।
জানাজা শেষে নিহারের বড় ভাই রাব্বি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার একটা মাত্র ভাই। এই বছরে নিহার রূপনগর মডেল স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ছেলের শোকে আমার মা আর বাবা মারা যাওয়ার মতো হয়ে গেছে। আজ রাতেই লাশ আমাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়ায় নিয়ে যাব। সেখানে তার কবর দিব।’
মসজিদ থেকে ছেলের লাশ কাঁধে নিয়ে সারোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিহারের জন্য ছয়দিন আগে দুটি নতুন জামা আর স্কুল ব্যাগ কিনে দিছি। এগুলো ঘরে রেখে আমি কীভাবে থাকব? ছেলের সাথে নতুন জামা-ব্যাগ কবরে রেখে আসব। আমার ছোট ছেলে আমার কলিজা লাগে।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর রুবেল (১০) ও রমজানের (৮) লাশ ঝিলপাড়ের বস্তিতে নেওয়া হয়। তবে তাদের জানাজা সেখানে হয়নি। শুধু লাশ দুটিকে বস্তিতে রেখে কিছুক্ষণের ভেতরে তাদের নেওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। রুবেলকে নেওয়া হয় ভোলার চর ফ্যাশানের নুরাবাদ গ্রামে। আর রমজানকে নেওয়া হয় কিশোরগঞ্জের ফুলবাড়ি।
গতকাল বুধবার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সাতজন নিহত হয়। এরমধ্যে ছয়জনই শিশু। নিহত তিনজনকে ঝিলপাড়ের বস্তি এলাকায় নেওয়া হয়। বাকি চারজনকে হাসপাতাল থেকে তাদের নিজ গ্রামে নেওয়া হয়।