বরগুনায় সহিংসতায় আ. লীগের প্রার্থীসহ গুলিবিদ্ধ ৭
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/12/30/photo-1451468872.jpg)
বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজসহ ৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ মহারাজ বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের বর্তমান সভাপতি। গুরুতর আহত অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকেসহ গুলিবিদ্ধ চারজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কামরুল আহসান মহারাজের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক কিসলু জানান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের কালো টাকার প্রভাবে এখানকার পুলিশ প্রশাসন শুরু থেকেই তাদের সাথে বিরূপ আচরণ করে আসছে। তিনি বলেন, বরগুনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এজেন্টদের অস্ত্রের মুখে হুমকি দিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রের এজেন্টদের সাথেও একই আচরণ করা হয়।
অ্যাডভোকেট কিসলু বলেন, দুপুরের দিকে মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আসহান মহারাজসহ বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা-কর্মী বরগুনা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে উপস্থিত হলে পুলিশ তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় মহারাজের মাথায় গুলি লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একই সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের আরো অনেক নেতা-কর্মী সেখানে গুলিবিদ্ধ হন বলে তিনি জানান। এ অবস্থায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না বলে তিনি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের এজেন্টদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় পুলিশের একজন উপপরিদর্শ (এসআই) জহিরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকের এজেন্ট অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর পল্টুকে পিস্তল দেখিয়ে গুলি করে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করেন নৌকা প্রতীকের এজেন্টরা। এ খবর শুনে ওই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে প্রশাসনকে অভিযুক্ত করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের প্রাথী কামরুল আহসান মহারাজ। পরে দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে এক সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।
এ ঘোষণা দেওয়ার পর বরগুনা সরকারি কলেজ ভোটকেন্দ্রে তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার খবর শুনে বেশ কয়েকজন দলীয় নেতা-কর্মীসহ অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ ওই কেন্দ্রের দিকে যান। এ সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়লে অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজসহ ৭ নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অন্যরা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে ভোট গ্রহণ শুরুর পর পরই সকাল ৯টার দিকে বরগুনা পৌরসভার গগন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), প্রিসাইডিং অফিসার এবং সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৫০ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটগ্রহণ শুরু হতেই সকাল ৯টার দিকে একদল সন্ত্রাসী কেন্দ্র দখল করে ভোট কারচুপির চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় সাময়িকভাবে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে প্রশাসন। ভোট দিতে না পেরে এতে ক্ষিপ্ত হয় সাধারণ ভোটাররা। এ সময় উত্তেজিত জনতা ভোটকেন্দ্র লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে আহত হয় সদর থানার ওসি রিয়াজ হোসেন, প্রিসাইডিং অফিসার মঞ্জুরুল আলম, সময় টিভির ক্যামেরাম্যান এস এম সিফাত। এ সময় ১০টি গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ওই ভোটকেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কর্মকর্তা।
বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজের আহত হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন। বিস্তারিত না জেনে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরগুনা পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, গোলাগুলির খবর তারা শুনেছেন। তবে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একটি মাত্র ভোট কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।