নারীর ক্ষমতায়নে প্রধান বাধা দুর্নীতি : টিআইবি
নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথে অন্যতম প্রধান বাধা দুর্নীতি। নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্নীতির অভিজ্ঞতা লাভ করেন। দুর্নীতির শিকার, সংঘটক ও মাধ্যম হিসেবে নারীর সাথে দুর্নীতির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত ‘নারীর অভিজ্ঞতায় দুর্নীতি : বাংলাদেশের দুটি ইউনিয়নের চিত্র’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। টিআইবির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
টিআইবির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপনির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা (পুলিশ), এনজিও, বিচারিক সেবা, ভূমি, ব্যাংক, পল্লী বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সেবা খাতে সেবা নিতে গিয়ে নারীরা নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ জোর করে আদায়, প্রতারণা, স্বজনপ্রীতি ও দায়িত্বে অবহেলার মতো দুর্নীতির শিকার হয়ে থাকেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, নারীর ওপর দুর্নীতির প্রভাব বহুমাত্রিক। প্রথমত নারীর ওপর দুর্নীতির ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে প্রভাব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা যায়, ডাক্তারের অবহেলার কারণে নারী রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতির কারণে নারীদের শারীরিক ক্ষতি, যেমন ভুল চিকিৎসার কারণে জরায়ু কেটে ফেলা, ভুল জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি স্থাপন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন নারীরা। ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারণে নারীর অতিরিক্ত ব্যয় হয় এবং তাঁর নির্ধারিত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন। এ ছাড়া দুর্নীতির কারণে তাঁর প্রাপ্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানকারীর অবস্থানে থেকে নারীদের একটি অংশের দুর্নীতিতে সংঘটক হিসেবে জড়িত রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে খালি চেকে নারী সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করা হয় আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে। পারিবারিক পর্যায়ে নারীকে ব্যবহার করে এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ, ব্যাংকঋণ বা দাদনের টাকা আত্মসাৎ করার উদাহরণও রয়েছে।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, যাঁরা সংখ্যালঘু নারী তাঁরা দ্বিমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক নানা পর্যায়ে নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। নারী যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, তাঁর অধিকারের সম্মানজনক স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, যাঁরা ক্ষমতায় যান, তাঁরা ভুলে যান ক্ষমতার সাথে মর্যাদার সম্পর্কের কথা, আর সে জন্যই ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে ক্ষমতার সাথে মর্যাদার বিষয়টি সংযুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নারীর ওপর দুর্নীতির প্রভাব নিয়ন্ত্রণে টিআইবি আটটি সুপারিশ উপস্থাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা কার্যকর করা, ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যদের সমতাভিত্তিক ও আনুপাতিক কাজের পরিধি নির্দিষ্ট করা, প্রযোজ্য খাতে/প্রতিষ্ঠানে ‘ওয়ান স্টপ সেবা’র প্রচলন; যেসব প্রতিষ্ঠানে নারীরা সেবা নিতে যান সেসব প্রতিষ্ঠানের সেবা, বিশেষ করে নারীদের জন্য সেবা সম্পর্কে জেন্ডার সংবেদনশীল পদ্ধতিতে তথ্য প্রচার; নারীদের তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য বিশেষ সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তদারকি বৃদ্ধি করা।