বিজিবি-কোস্টগার্ড ছাড়াই ইউপি ভোট করতে চায় ইসি
দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো দেশে হতে যাচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আনসার সদস্যদের মাঠে রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
যদিও এর আগে ২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এ তিন বাহিনীর পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও উপকূলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী কোস্টগার্ডের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু এবার এ দুই বাহিনীকে বাদ দিয়েই নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে ইসি।
ইসি মনে করছে, তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচনে সহিংসতার পরিমাণ অনেক কম হবে। কারণ, এ নির্বাচনে যারা অংশ নেয়, তারা সবাই পরিচিত এবং অনেক ক্ষেত্রে এসব নির্বাচনে একই পাড়া-মহল্লা বা পরিবারের লোক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাই এসব নির্বাচনে তেমন কোনো ঝামেলা হবে না। তবে প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলার অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করবে ইসি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঠে রাখার চিন্তা করছে কমিশন। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। পুলিশের সংখ্যা যদি কম হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে অস্ত্রসহ ও অস্ত্র ছাড়া আনসার সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে এ নির্বাচনে আগের চেয়ে অধিক সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। পুলিশ এক ধাপে সর্বোচ্চ সাড়ে তিনশ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করার পক্ষে।
সূত্র আরো জানায়, পুলিশের এ বক্তব্য মাথায় রেখে প্রথমে ১০ থেকে ১২ ধাপে ইউপি নির্বাচন করতে চেয়েছিল ইসি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা ও রোজার কথা মাথায় রেখে ছয় ধাপে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
পরে ১১ ফেব্রুয়ারি ছয় ধাপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২২ মার্চ ৭৩৯টি ইউনিয়নে ভোট হবে। এই ধাপে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিল করতে হবে। এবারই প্রথম দলীয়ভাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। ইসিতে ৪০টি নিবন্ধিত দলকে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম জানাতে হবে।
এ ছাড়া ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মার্চ ৭১০টি, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৭১১টি, চতুর্থ ধাপে ৭ মে ৭২৮টি, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ৭১৪টি এবং ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হবে।
ইসি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে এ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। শুরু হয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ। এ ছাড়া ইউপি নির্বাচনের জন্য প্রথম ধাপে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যপদের জন্য ছয় কোটি ব্যালট পেপার এবং নির্বাচনী কাজের জন্য প্রতীকের পোস্টার, অন্যান্য ফরম ছাপানোর জন্য গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং (বিজি) প্রেসকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তবে চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ শুরু করতে হবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশের নয় কোটি ৯৯ লাখের মধ্যে অন্তত সাত কোটি ৭০ লাখ ভোটার রয়েছে সাড়ে চার হাজার ইউপিতে। এই হিসাবে দেশের সব ইউপির জন্য চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্যপদ মিলিয়ে এবার প্রায় ২৪ কোটি ব্যালট পেপার ছাপতে হবে।
দেশে ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩ ও ২০১১ সালে মোট আটবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে।
বর্তমানে দেশে চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনায় ভোটের জন্য উপযুক্ত ইউনিয়ন বাছাই করে ধাপে ধাপে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ২৯(৩) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তারিখ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। এ হিসাবে গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে সবকটি ইউপির নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।