শরীয়তপুরে কৃষক খুন, শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার দক্ষিণ ডুবলদিয়া গ্রামে গতকাল সোমবার খিদির বেপারি (৩৮) নামের এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জাজিরা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন কাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জাজিরা থানার পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, শ্রমিক লীগ নেতা নূর হোসেন কাজী স্থানীয় মনাই ছৈয়াল কান্দির কৃষকদের জমি দখল করে তার মধ্যে খনন যন্ত্র বসিয়ে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করতেন। মাটি কাটা বন্ধসহ খননযন্ত্র অপসারণের দাবিতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। প্রশাসন খননযন্ত্রটি অপসারণের নির্দেশ দেয়। নূর হোসেন মাটি কাটা বন্ধ করলেও খননযন্ত্রটি ওখানেই রেখে দেন। এ নিয়ে জাজিরা পৌরসভার দক্ষিণ ডুবলদিয়া গ্রামের কৃষক খিদির বেপারির সাথে নূর হোসেনের বিরোধ তৈরি হয়। এ ঘটনার জের ধরে গত শনিবার নূর হোসেন তাঁর সমর্থকদের নিয়ে খিদির বেপারির জমির গম ও ধনিয়া ফসল লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনাটি নিয়ে জাজিরা থানায় মামলা করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সোমবার খিদির বেপারি তাদের কিছু জমি বিক্রি করে আট লাখ টাকা নিয়ে উপজেলা সদর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সাথে ছিলেন ভাই আমির হোসেন বেপারি ও আনোয়ার বেপারি। বাড়ির কাছে আব্দুর রাজ্জাক উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে নূর হোসেন লোকজন নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় এবং তিনজনকে কুপিয়ে সড়কে ফেলে রেখে যায়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত ৮টার দিকে খিদির বেপারির মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী নূর হোসেন পক্ষের পাঁচটি বসতঘর ভাঙচুর করে। নিহত খিদিরের চাচা দবির বেপারি বাদী হয়ে নূর হোসেন কাজীসহ ৩৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে খিদির বেপারির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা কান্নাকাটি করছে। মৃত্যুর খবর শুনে সমবেদনা জানাতে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। খিদিরের মা রেহেলা বেগম বার বার মাটিতে পড়ে মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন।
বাবাকে হারানোর খবর শুনে অচেতন হয়ে মাটিতেই পড়েছিল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে পুষ্প আক্তার (১০)। পাঁচ বছর বয়সী ছেলে বাহাদুরকে বুকে জড়িয়ে নির্বাক হয়ে বসেছিলেন খিদিরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। তাঁর দুই চোখ থেকে অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে খিদির বেপারির স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘নূর হোসেন আমাদের কৃষি জমিসহ গ্রামের অনেক কৃষকের জমি দখল করে মাটি উত্তোলন করছিলেন। আমার স্বামী তার প্রতিবাদ করায় তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এখন শিশু সন্তানদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াব? যারা আমাকে স্বামীহারা, সন্তানদের পিতাহারা করেছে তাদের ফাঁসি চাই।’
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বলেন, ড্রেজার দিয়ে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার ঘটনার বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।