হবিগঞ্জে চিকিৎসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা, চিকিৎসা বন্ধ
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীনকে চিকিৎসা প্রদানে অবহেলা ও তাঁর দুই কর্মচারীকে লাঞ্ছিতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার পর হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মঈনসহ ১৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম এস এম হুমায়ুন কবির এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ হাসপাতালে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি বিভাগসহ সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
মামলার বাদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের নাজির উসমান রেজাউল করিম খোকন অভিযোগ করেন, সোমবার রাতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মঈন ও হাসপাতালের ব্রাদার হাবিবসহ অন্যান্য কর্মচারীরা তাঁর চিকিৎসা প্রদানে অবহেলা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের নিরাপত্তারক্ষী পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনি ও নাজির উসমান রেজাউল করিম খোকনকে লাঞ্ছিত ও অপহরণের চেষ্টা করেন আসামিরা।
উসমান রেজাউল করিম খোকন আজ বিকেলে ১৩ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম এস এম হুমায়ুন কবির মামলাটি আমলে নিয়ে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নজিবুল শহীদ জানান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ হাসপাতালে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলে গেছেন। ফলে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ৯টার দিকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন। হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন কোনো কক্ষ না থাকায় তাঁকে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কক্ষ গুছিয়ে দিতে বিলম্ব হওয়ায় জেলা জজ আদালতের নাজির রেজাউল করিম খোকন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মঈনকে গালাগাল করেন। মাফরোজা পারভীনকে নির্ধারিত কক্ষে নেওয়ার পর তাঁর দেহরক্ষী পুলিশ কনস্টেবল নূরে আলম রনি কক্ষ দিতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত হয়ে জরুরি বিভাগে কর্মরত ব্রাদার (নার্স) হাবিবুর রহমানকে জোর করে সদর মডেল থানায় নিয়ে যান এবং রাস্তায় তাঁকে মারধর করেন।
এর প্রতিবাদে গতকাল রাতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন হাসপাতালটির চিকিৎসক ও কর্মীরা। এ সময় দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা। পরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে কাজে ফিরে যান তাঁরা।
গতকাল রাতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার দুপুর ১০টা থেকে আবারও কর্মবিরতি শুরুর প্রস্তুতি নেন হাসপাতালটির চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলামসহ স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি হাসপাতালে এসে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস ও সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। তাঁদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।
এদিকে, আজ দুপুরে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন।