সাতক্ষীরায় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ১৪ মামলা

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে সাতক্ষীরার বিভিন্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঢুকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জিম্মি করে জালভোট দেওয়া, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করাসহ নানা অনিয়মের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা হয়েছে।
গত ২২ মার্চ (মঙ্গলবার) নির্বাচনের সময় অনিয়মের অভিযোগে পাঁচটি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৪টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে এসব কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয় ইসি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইসির এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। মামলার কয়েকজন বাদী জানিয়েছেন, মামলায় আসামিভুক্ত হবেন তাঁরা, যাঁদের ব্যালটের অনুকূলে সিল মারা হয়েছে।
সদর উপজেলার স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলো হচ্ছে আলীপুর ইউনিয়নের আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাড়ুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাংনিয়া আমিনিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ভাগবহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অভয়তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের কলাটুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শাকদাহ দাখিল মাদ্রাসা, কেরালকাতা ইউনিয়নের বালিয়ানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৈখালী মাহাজেরিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শৈলখালী মাদ্রাসা।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়ুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মো. মহিয়ূর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদপ্রার্থী মোছা. মনোয়ারা খাতুন ও সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মো. রমজান আলীসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
গাংনিয়া আমিনিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. রাশিদুর রহমান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের মো. মহিয়ূর রহমান, সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী মোছা. ফরিদা খাতুন ও সদস্য পদপ্রার্থী আব্দুস সালামসহ ১৫-২০ জনকে আসামি করেছেন।
মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মাহবুবার রহমান বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিয়ূর রহমান, সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী মোছা. ফরিদা খাতুন ও সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী মো. জাহিদুর রহমানসহ ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. নাজিমউদ্দীন বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মো. মহিয়ূর রহমান, সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী মোছা. ফরিদা খাতুন ও সাধারণ সদস্য পদ প্রার্থী মো. আছিফ হোসেনসহ ১৫-২০ জনকে আসামি করেছেন।
সদর থানার ওসি জানান, ২০১০ সালের বিধি ৭৭(১) এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩/৬ ধারায় এসব মামলা রেকর্ড হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. লিয়াকত হোসেন বাদী হয়ে, কৈখালী মাহাজেরিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দেবাশীষ মণ্ডল বাদী হয়ে এবং শৈলখালী মাদ্রাসার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বসন্ত কুমার বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে এসব মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের শাকদাহ ও কলাটুপি ভোটকেন্দ্রের স্ব স্ব প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আসলামুল হক আসলাম, শাকদাহ কেন্দ্রের সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম, কলাটুপি কেন্দ্রের সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী সুলতান সরদার, কেরালকাতা ইউনিয়নের বলিয়ানপুর কেন্দ্রের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী স ম মোর্শেদ আলী, ওই কেন্দ্রের সাধারণ সদস্য পদপ্রার্থী রবিউল ইসলাম ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদপ্রার্থী সাবিনা ইয়াছমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম এসব মামলা দায়েরের ঘটনা নিশ্চিত করেন।
এদিকে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা ইউনিয়নের ভাগবহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অভয়তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনায় স্ব স্ব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আজিজুর রহমানসহ ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নওশাদ আলী বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে ১৫-২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।