রসিকতা করে ক্ষমতাসীনরা পার পাবে না : খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদের মতো একজন রাজনীতিবিদ এভাবে উধাও হয়ে যাবে, আর ক্ষমতাসীনরা সেটা নিয়ে উৎকট রসিকতা করে পার পেয়ে যাবে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।’
আজ রোববার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপি-প্রধান এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মানবাধিকার সংগঠন, বিভিন্ন সমাজশক্তি ও সচেতন নাগরিকদের এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই। কেননা দেশে এখন কেউ-ই নিরাপদ নয়, যে কেউ যে কোনো সময় গুম কিংবা খুন হয়ে যেতে পারেন।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখনো তাঁকে (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) মুক্তি দেওয়া, আদালতে হাজির করা, এমনকি গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার পর্যন্ত করা হচ্ছে না। এতে তাঁর পরিবারের সদস্য, স্বজন, শুভানুধ্যায়ী, সহকর্মী ও দেশবাসীর মতো আমার উৎকণ্ঠাও সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।’
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেন, ‘বিএনপি নেতা, সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী, লাকসামের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু, ঢাকার নির্বাচিত কমিশনার চৌধুরী আলম এবং লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবীর পারভেজের মতো অনেককে গ্রেপ্তারের পর গুম করা হয়েছে। দীর্ঘদিনেও তাঁদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। একটি সভ্য দেশে ক্ষমতার দখলদারি টিকিয়ে রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমন গেস্টাপো বাহিনীর মতো ব্যবহার করাকে কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না।’
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার আগে পরে স্থানীয় তরুণ ও নিরাপত্তাকর্মী এবং বাসার দারোয়ানের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তাদের পরিচালিত অভিযানের অনেক প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছে। কাজেই তাঁকে গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করে দায় এড়াবার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়টাও সরকারের মনে রাখা উচিত।’ বলেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির নেত্রী বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদকে অনতিবিলম্বে তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার কিংবা আদালতে হাজির করার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ভবিষ্যতে এর জন্য সরকারকে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।’
১০ মার্চ থেকে ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে তাঁর পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান চেয়ে ১১ মার্চ রাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যান তাঁর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। তবে কোনো থানাই তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি।
আজ সকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করারও আবেদন জানান।
১২ মার্চ হাসিনা আহমেদের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এবং রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ৮ এপ্রিল।
২০ মার্চ রাতে সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার ‘খবরে’ কয়েকটি চরে অভিযান চালায় গাইবান্ধার পুলিশ। পরে জানা যায়, খবরটি ভিত্তিহীন।