তনু হত্যা নিয়ে ‘আমরা এবং তারা’ বিভেদ নয় : মিজানুর
কুমিল্লার কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘আমরা’ এবং ‘তারা’ এভাবে বিভেদ যেন সৃষ্টি না করা হয় সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। নৃশংস এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থেই এমনটি হওয়া ‘বাঞ্ছনীয়’ বলে মনে করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিশনের একটি দল কুমিল্লা সফর করে। পরে তনু হত্যাকাণ্ড এবং এ ঘটনার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে কুমিল্লা সার্কিট হাউজে বেশ কিছু ‘সুপারিশ বা পর্যবেক্ষণ’ তুলে ধরেন দলনেতা।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘তনুকে হত্যা করা হয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। এটি কোনো বাহিনীর বা সংস্থার ব্যাপার নয়, অপরাধী যেই হউক না কেন প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করে ন্যায়বিচারের আওতায় আনলে সবার ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। যদি ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়াকে ধামাচাপা দেওয়া হয়, আরেকটি জজ মিয়া নাটক সাজানো হয় তাহলে দেশবাসী তা কখনো গ্রহণ করবে না।’
সফরকালে কমিশনের সদস্যরা তনুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে তাঁরা তনু হত্যাকাণ্ডের স্থান কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা পরিদর্শন করেন।
গত ২০ মার্চ সন্ধ্যায় ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে টিউশনির জন্য বেরিয়ে যান তনু। পরে বাসায় ফিরে না আসায় তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেন পরিবারের সদস্যরা। রাতে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন কালভার্টের পাশে ঝোপের মধ্যে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয় তাঁর লাশ।
তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লাজুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। প্রতিবাদ কুমিল্লা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকাসহ সারা দেশে। এ অবস্থার মধ্যেই গতকাল বুধবার তনুর লাশ পুনর্তদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হয়।
জাতীয় মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “একটি বার্তা বোধহয় সবারই স্মরণে রাখা দরকার। একটি মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা যেন কখনোই ‘আমরা’ এবং ‘তারা’ এরকম বিভেদ সৃষ্টি না করি। বরং দুটি ভাগ হতে পারে। একদিকে আমরা সমগ্র দেশবাসী যারা এ ঘটনার ন্যায়বিচার প্রার্থী এবং অপরদিকে যারা অপরাধী তারা। আমরা চাই, যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের ন্যায়বিচারের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনানুযায়ী দণ্ড দেওয়া হোক। এর বাইরে অন্য যেকোনো বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই বোধ হয় কাঙ্ক্ষিত নয়। এ ব্যাপারে সবার সতর্কতা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।’
‘অতি সতর্কতা কিন্তু মাঝে মাঝে দুর্বলতার বহির্প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে’- এমনটি উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তাঁর সুপারিশে বলেন, ‘বাংলায় একটি কথা আছে, চোরের মন পুলিশ পুলিশ। সুতরাং অতি সতকর্তা কেউ যেন অবলম্বন না করেন, যেটিকে অন্যভাবে তাদেরই দুর্বলতা হিসেবে মনে করা যেতে পারে, সেই রকম কর্মকাণ্ড থেকে যেন প্রত্যেকে বিরত থাকেন, সেটি আমাদের সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে।’
তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা সঠিক ও এর প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে মিজানুর বলেন, ‘কেননা প্রথম ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ প্রতিবেদন এখনো উপস্থাপিত হয়নি। কিন্তু প্রাথমিকভাবে যেটি রয়েছে, সেটি আরো অনেক প্রশ্নের উদ্রেগ করে এবং সেই প্রতিবেদন আসলেই সঠিক কি-না সেটিও কিন্তু বিবেচনার দাবি রাখে। তাই আমরা মনে করি, দ্বিতীয় যে ময়নাকদন্ত হচ্ছে সেটি যেন বাড়তি কোনো প্রশ্নের উদ্রেগ না করে। বরঞ্চ যে সব প্রম্নের উত্তর পাওয়া আবশ্যক ন্যায়বিচারের স্বার্থে সেই কাজটি করতে সাহায্য করবে বলেই আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই।’
পাশাপাশি ড. মিজানুর তনু হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সিআইডি এবং বিচার বিভাগের প্রতি অনুরোধ এবং আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যে বা যারা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনকে কোনো না কোনো ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে থাকে, তাহলে যারা শুধু প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছেন তারা নয় বরং যারা এই প্রতিবেদন তৈরিতে কোনো ধরনের সাহস জুগিয়েছেন বা বাধ্য করেছেন বা কোনোভাবে তাদেরকে উৎসাহ জুগিয়েছেন- সবাইকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত বলে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা মনে করি।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা সার্কিট হাউজে তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।