মংলা বন্দরে নির্মিত হবে আরো দুটি জেটি

মংলা বন্দরে এবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দুটি জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বন্দরের ৩ ও ৪ নম্বর নামে এ দুটি জেটি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জিএমএপিএস-পাওয়ার পিসি কনসোর্টিয়াম নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে মংলা বন্দরের ওপর কয়েক গুণ বেশি চাপ সামাল দেওয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে বন্দরটির কর্মক্ষমতা বাড়াতেই এই জেটি নির্মাণ করা হবে। পিপিপির এই প্রকল্প নীতিগতভাবে অনুমোদনের জন্য এখন অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে রয়েছে। খুব সহসাই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে বলে আশা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মংলা বন্দরের কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় চার দশক আগে একটি বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা সমুদ্রবন্দরের এই জেটি দুটি নির্মাণের উন্নয়নকাজ শুরু করলেও পরে তা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর বর্তমান সরকার ফের জেটি দুটির কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
পিপিপির ভিত্তিতে এই উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় রিকোয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশন (আরএফকিউ) আহ্বান করলে তিনটি প্রতিষ্ঠান এতে সাড়া দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড (ইউইসিএল), কনসোর্টিয়াম অব সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড অ্যান্ড সামিট পাওয়ার লিমিটেড (এসএপিএল-এপিএল) এবং জিএমএপিএস-পাওয়ার পিসি কনসোর্টিয়াম। এর মধ্যে কারিগরি যাচাই কমিটি (টিইসি) জিএমএপিএস-পাওয়ার পিসি কনসোর্টিয়ামকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কনসেশন চুক্তি চূড়ান্ত করে।
সূত্র আরো জানায়, আলোচিত এই পিপিপি প্রকল্পের সময় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ বছর। এ সময়ের মধ্যে দুই বছর নির্মাণকাজে ব্যয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের জাহাজের আগমনের হার ৫০ শতাংশ বাড়বে। এর ফলে প্রথম পাঁচ বছর পিপিপি প্রকল্পের জেটি পাবে ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ আর বন্দরের জেটি পাবে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। দ্বিতীয় পাঁচ বছর প্রকল্পের জেটি পাবে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বন্দরের জেটি পাবে ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ। পরের ১৮ বছর প্রকল্পের জেটি পাবে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বন্দরের জেটি পাবে ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া ফিল্ড রয়ালিটি হিসেবে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রথম বছর পাবে দুই লাখ ডলার, যা পরবর্তী বছরগুলোতে পূর্ববর্তী বছরগুলো থেকে ২ শতাংশ হারে বাড়তে থাকবে। ভ্যারিয়েবল রয়ালিটি হিসেবে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনারপ্রতি দুই ডলার এবং প্রতি টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আরো পাবে ২০ সেন্ট করে।
মংলা বন্দরের চিফ প্ল্যানিং অফিসার মো. জহিরুল হক জানান, ‘পিপিপির মাধ্যমে মংলা বন্দরের ৩ ও ৪ নম্বর নামে এ দুটি জেটি উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের পর কাজ শেষ করতে দুই বছর সময় লাগবে। পিপিপির এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে মংলা বন্দরের ওপর কয়েক গুণ বেশি চাপ সামাল দেওয়া সহজতর হবে।’
মো. জহিরুল হক আরো জানান, বন্দর উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের আমলে ৫৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি উন্নয়ন প্রকল্প ও চারটি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্প ও চারটি উন্নয়ন কর্মসূচির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৮৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০টি আধুনিক কনটেইনার কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২৬০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আউটার বার ড্রেজিং ও ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ একটি কাটার সেকশন ড্রেজার ক্রয় প্রকল্পসহ বৈদেশিক অর্থায়ানে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের নতুন কনটেইনার টার্মিনাল, কনটেইনার ইয়ার্ড, আধুনিক স্ক্যানার, বন্দর এলাকার সব সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের আটটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
এই কর্মকর্তা আরো জানান, বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের চাপ ক্রমান্বয়ে সামাল দিতে বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ১০ ও ১১ নম্বর জেটি দুটিকেও হাইমাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণের পরিকল্পনাসহ বন্দরে পণ্য পরিবহনের চাপ কমাতে মংলা-ঢাকা সড়ককে দ্রুত চার লেন সড়ক নির্মাণে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।