গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলল নির্বাচন কমিশন

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পত্রিকায় ও টিভি টকশোতে বিভ্রান্তিমূলক আলোচনা হচ্ছে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, নির্বাচনে সহিংসতা পর্যায়ক্রমে কমে আসছে। আগামী ধাপের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আজ সোমবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে ইউপি নির্বাচনে প্রথম দুই ধাপের সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ইসির পদক্ষেপের ফিরিস্তিও তুলে ধরা হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে সহিংসতায় প্রায় ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের নির্বাচনের দিন (২২ মার্চ) অন্তত ১২ জন এবং দ্বিতীয় ধাপের ভোটের দিন (৩১ মার্চ) অন্তত আটজনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনা নিয়ে বিএনপির পাশাপাশি সরকারের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নানা অভিযোগ করেছে।
যদিও আজ ইসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ের উল্লেখ করা হয়নি।
ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা বন্ধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন করা হয়েছে এবং সতর্ক করা হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেল। কারণ একই সঙ্গে তাদের হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে যে, এই দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করলে বা ব্যর্থ হলে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।’
ইসি জানিয়েছে, দায়িত্বে অবহেলার জন্য এরই মধ্যে কেন্দ্র রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ১১ জন সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। ভোট কারচুপির অভিযোগে ১০২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে যাদের প্রতীকে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এ ছাড়া ছয়জন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও একজন পুলিশ সুপারকে (এসপি) কমিশনে তলব করে জবাবদিহি করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসি। সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, এ ছাড়া তিনজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চারজন ওসিকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বদলি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ১৩০ জনকে মোট চার লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে মামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ইসির বিজ্ঞপ্তিতে।
ইসি হিসাব মতে, ‘প্রথম পর্যায়ে ছয় হাজার ৮৭০টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত হওয়ার কারণে ৬৫টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে যা মোট কেন্দ্রের মাত্র শূন্য দশমিক ৯৪ ভাগ। দ্বিতীয় পর্যায়ে ছয় হাজার ৮৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে বন্ধ হয়েছে ৩৭টি, যা মোট কেন্দ্রের মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ ভাগ। এত দেখা যায় দ্বিতীয় পর্যায়ে কেন্দ্র স্থগিতের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কমে গেছে। দুই পর্যায়েই কেন্দ্র বন্ধের হার খুবই নগণ্য- এক শতাংশরও কম যা এ ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই দৃশ্যমান করে।’
ইসির দাবি, বেসরকারি টেলিভিশনগুলো ভোটগ্রহণের দিন সার্বক্ষণিকভাবে দেশব্যাপী তাদের ভ্রাম্যমাণ ক্যামেরা দ্বারা ভোটের দৃশ্য দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন। সেখানে দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোটারদের বিরাট লম্বা লাইনে মহিলা, বৃদ্ধ ও Handicap ভোটাদেরকে সুশৃঙ্খলভাবে তাঁদের ভোট প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। কোনোরূপ বাধা ছাড়াই সুন্দরভাবে ভোট দিতে পেরেছেন বলেও তাদের বক্তব্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। এর সঙ্গে কিছু কিছু কেন্দ্রে ও কোথাও কোথাও কেন্দ্রের বাইরেও প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।’