‘বিচারহীনতার কারণে দেশে হত্যা নির্যাতন বেড়ে গেছে’
‘আমাদের পিতৃভূমি কেড়ে নেওয়ার জন্য নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আমরা যদি লড়াই না করি, আমাদের ভিটে-বাড়ি যদি বেদখল হয়ে যায় তাহলে আমাদের অস্তিত্ব নিঃশেষ হয়ে যেতে বাধ্য। কল্পনা চাকমা অপহরণের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বিচারহীনতার কারণে আজ দেশে হত্যা-নির্যাতন বেড়ে গেছে। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বীরের মতো গর্জে উঠতে হবে।’
পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পূর্তি ও পঞ্চম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।
আজ মঙ্গলবার রাঙামাটির কুতুকছড়ি বড় মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল যুব গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।
‘সরকারের দালাল, সুবিধাবাদী, প্রতিক্রিয়াশীলদের চিনে রাখুন, জাতীয় মুক্তির সনদ পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন অর্জনের লক্ষ্যে ঐক্য সংহতি জোরদার করুন’ এই স্লোগান নিয়ে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাইকেল চাকমা। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সিমন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রিনা চাকমা, সাজেক নারীসমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য নারী সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সোনালী চাকমা, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের টেকনাফ ও উখিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মণি স্বপন চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নারীসমাজকে শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য বিচ্ছিন্নভাবে শুধু নারীদের নিয়ে আন্দোলন করলে হবে না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বৃহত্তর আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই।
যুব গণসমাবেশে ইউপিডিএফের সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসার লিখিত বার্তা পড়েন ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা।
লিখিত বার্তায় ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসা বলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ এমন একসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ক্ষমতাসীন সরকারের গণবিরোধী হিংস্ররূপ শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর কাছে নয়, স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সারা দেশবাসীর কাছেও। ক্ষমতাসীন সরকারের নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, অন্যায়-অত্যাচার জোর-জবরদস্তির বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর মতোই দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত হচ্ছে। নার্সসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অতি সাম্প্রতিককালে একটি সুরক্ষিত এলাকায় ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণ ও হত্যার এতদিন পরও অপরাধী চক্রকে গ্রেপ্তার ও বিচারের সম্মুখীন না করা, অপরাধীদের আড়াল করতে নানা টালবাহানার কারণে সরকারের প্রতি সাধারণ জনগণ চরমভাবে বিক্ষুব্ধ। তনু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সমস্ত অন্যায়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে, এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে, যার সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপন করতে রাস্তায় নামছে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। এ প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঢেউ বইছে পার্বত্য চট্টগ্রামেও। অত্যন্ত যৌক্তিক কারণে এ ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় ইউপিডিএফ।
সমাবেশ শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কুতুকছড়ি বড় মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বের হয়ে হেডম্যানপাড়া মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
যুব গণসমাবেশে তিন পার্বত্য জেলা ও ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে সাত সহস্রাধিক নেতাকর্মী-সমর্থকসহ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ-উখিয়া উপজেলা এবং রাজশাহী ও দিনাজপুর থেকে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
পঞ্চম কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষে বুধবার নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।