ভোটে জীবন নয়, আধিপত্য বিস্তারই গুরুত্বপূর্ণ

মানুষের জীবন নয়, ভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আধিপত্য বিস্তারই গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই নির্বাচনী সহিংসতায় এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ শেষে বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নির্বাচন সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করবে। ভবিষ্যতে প্রার্থীও খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
urgentPhoto
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে মাদারীপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুজন মৃধা। প্রাণপ্রিয় সন্তানকে নিয়ে হয়তো আকাশসমান স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু সেই স্বপ্নের মৃত্যু হলো এক নিমেষেই।
এভাবেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মারা গেছেন ৩২ জন। তাঁদের অধিকাংশই আবার ঘটনার শিকার বলে উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
নির্বাচনে আহত হয়েছেন দুইশর বেশি মানুষ। ঠিক আগেরবার, অর্থাৎ ২০১১ সালে ১১ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গিয়েছিলেন চারজন। এবারের ছয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আরো চার ধাপ বাকি। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা যেখানে আরো সহিংসতার আশঙ্কা করছেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মানুষগুলোকে দেখতে যাওয়া, সমবেদনা প্রকাশ করা, কই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ জাতীয় কোনো ঘটনাই দেখলাম না। তার মানে কী? ভোটটাই আমার মুখ্য। ভোটের মাধ্যমে আধিপত্য প্রতিষ্ঠাটাই হচ্ছে আমার প্রধান কাজ। এখানে কে মরল, কে বাঁচল, কী হলো এগুলো কোনো বিষয় নয়। এত মানুষের জীবন নাশ করে এই নির্বাচন আমাকে কী দেবে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুরুল আমিন বলেন, ‘তৃতীয় ধাপে আরো খারাপ কিছু হবে। সেটা কেন? যিনি প্রতীক পান না, তিনি কিন্তু ভয় পাবেন না। তিনি কিন্তু প্রশাসনকে, পুলিশকে ভয় পাচ্ছেন না। কী জন্য ভয় পাচ্ছেন না। তিনিও তো আওয়ামী লীগ করেন।’
‘মনে করেন, প্রেসিডেন্ট প্রতীক পেয়েছে, সেক্রেটারি প্রতীক পায়নি, সেক্রেটারি তো মনে করবে, পুলিশ তো আমার কথাও শোনে। অর্থাৎ, প্রশাসনিক ভয়-ভীতি, এটিও যেমন তাদের নেই এবং এই যে সংঘাত, যে পরিবার থেকে একটি মানুষ মারা যায়, এ কিন্তু প্রতিশোধ নিতে চায়। এই যে দ্বন্দ্ব, এ দ্বন্দ্ব তো দীর্ঘদিনের জন্য শুরু হয়ে গেল।’
এখন পর্যন্ত দুই ধাপে এক হাজার ৩৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। অনিয়ম, কেন্দ্র দখল ও হামলার ঘটনায় স্থগিত করা হয়েছে ৯৫টি কেন্দ্রের নির্বাচন। তার পরও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদে। এমন জয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিজয়ের উচ্ছ্বাস থাকলেও সহিংসতা আর মৃত্যুর ঘটনায় স্বস্তি পাওয়া কঠিন বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিশ্লেষকরা। আর দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সহিংসতা যেমন বেড়েছে, তেমনি ইউনিয়ন পরিষদও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেই মত তাঁদের।
ড. তোফায়েল বলেন, ‘নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা, এটা খুব প্রকট হয়ে গেছে এবং এ জাতীয় নির্বাচনে ভবিষ্যতে কোনো ভালো প্রার্থী পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।’
নির্বাচনের পরের ধাপগুলোতে সহিংসতা কমাতে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের সহায়তা করার আহ্বান স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের।