আজ তৃতীয় ধাপের ভোট

আজ সারা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, সকাল ৮টা থেকে দেশের ৪৭ জেলার ৬২০টি ইউপির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমূল পর্যায়ের এই ভোটকে নির্বিঘ্ন করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
নির্বাচনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সব ধরনের প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী বিশেষ নিরাপত্তায় পৌঁছে গেছে সব কেন্দ্রে।
তৃতীয় ধাপের ভোটে মোট দুই হাজার ৯৯২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁদের মধ্যে মোট ১৪টি রাজনৈতিক দল এক হাজার ৫৪৩ জন প্রার্থী দিয়েছে। অবশিষ্ট এক হাজার ৪৪৯ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬২১ জন, বিএনপি ৫৭৫ জন, জাতীয় পার্টি ১৮৪ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ২৮ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১৪ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৯৩ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি দুজন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি একজন, খেলাফত মজলিস চারজন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি একজন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তিনজন, ইসলামী ঐক্যজোট তিনজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১৩ জন ও অন্যান্য একজন প্রার্থী দিয়েছে।
প্রথম দফায় আওয়ামী লীগের ৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ধাপেও আওয়ামী লীগের ৩১ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তৃতীয় ধাপে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন ২৫ জন। এ পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩০ জনের বেশি। প্রথম ধাপের পর দাবি উঠলেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে বাড়তি কোনো নিরাপত্তা নেয়নি ইসি।
এ নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। একই সঙ্গে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নানা অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরাও অপরাধ তদারকিতে মাঠে থাকবেন।
ইসি সচিবালয়ের উপসচিব সামসুল আলম জানান, ভোটের দুদিন আগে থেকে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সহিংসতা রোধে বাড়তি কোনো নিরাপত্তা নেওয়া হয়নি বলেও তিনি জানান। তবে এবারের নির্বাচনে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় দুটি করে র্যাবের মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে।
নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ইসির উপসচিব মো. সামসুল আলম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। স্বেচ্ছায় এলাকা না ছাড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ভোটের মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় ভোটের দিনের পূর্ববর্তী রাত ১২টা থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো প্রভৃতি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে ভোটগ্রহণের আগের তিনদিন থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এ ছাড়া ভোটের দিনের আগের রাত ১২টা থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত সব ধরনের নৌযান ও স্পিটবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলা হয়েছে। তবে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
নির্বাচনী পরিবেশ বাজায় রাখার ব্যর্থতায় গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে ইসি। জেলার পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ এবং কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মীর রকিবুল হক ও শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই ধাপের ইউপি ভোট হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত আটজন ওসিকে প্রত্যাহার করা হলেও এসপি প্রত্যাহারের ঘটনা এটিই প্রথম।
এবার সারা দেশে ছয় ধাপে ইউপি ভোট হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২২ মার্চ ৭১২টি ইউনিয়নে ও দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউনিয়নে ভোট হয়। চতুর্থ ধাপে ৭ মে ৭২৮টি, পঞ্চম ধাপে ২৮ মে ৭১৪টি এবং ষষ্ঠ ধাপে ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে।