আউশ উৎপাদন বাড়াতে নওগাঁয় চাষিদের আর্থিক প্রণোদনা
আউশ ধান চাষে বেশি সেচ দিতে হয় না। এতে পানির সাশ্রয় হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ওপরও চাপ কমে। আর উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের লাভ বেশি হয়। এ জন্য আউশ ধানের চাষ বাড়াতে নওগাঁর চাষিদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। মোট এক কোটি আট লাখ ৪৪ হাজার টাকা জেলার ১১টি উপজেলার আট হাজার ৭৫০ জন কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হলো। এর উদ্দেশ্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরের খরিপ-১ মৌসুমে উফশী আউশ ও নেরিকা আউশ চাষ বাড়ানো। এ জন্য প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ, রাসায়নিক সার, সেচ ও আগাছা দমন সহায়তা বাবদ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হলো।
নওগাঁ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, চলতি আউশ মৌসুমে উফশী আউশ চাষের জন্য আট হাজার ৩০০ জন কৃষক ও নেরিকা আউশ চাষের জন্য ৪৫০ জন কৃষকের মধ্যে এই আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হলো।
উফশী আউশচাষিদের জনপ্রতি এক বিঘা জমির বিপরীতে পাঁচ কেজি করে বীজ, ২০ কেজি করে ইউরিয়া সার, ১০ কেজি করে ডিএপি সার, ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। আর সেচ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৪০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে উফশী আউশচাষিদের ১৪ লাখ ১১ হাজার টাকা মূল্যের ৪১ হাজার ৫০০ কেজি বীজ, ২৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা মূল্যের এক লাখ ৬৬ হাজার কেজি ইউরিয়া সার, ১৯ লাখ নয় হাজার টাকা মূল্যের ৮৩ হাজার কেজি ডিএপি সার, ১০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা মূল্যের ৮৩ হাজার কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। আর সেচ সহায়তা বাবদ জনপ্রতি ৪০০ টাকা হিসাবে মোট ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে নেরিকা আউশ চাষের জন্য মোট ৪৫০ চাষিকে জনপ্রতি এক বিঘা জমির বিপরীতে ১০ কেজি বীজ, ২০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। আর সেচ সহায়তা বাবদ ৪০০ টাকা ও আগাছা দমন বাবদ ৪০০ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে নেরিকা আউশচাষিদের এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের চার হাজার ৫০০ কেজি বীজ, এক লাখ ২৬ হাজার টাকা মূল্যের নয় হাজার কেজি ইউরিয়া সার, এক লাখ তিন হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের চার হাজার ৫০০ কেজি ডিএপি সার, ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের চার হাজার ৫০০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। আর সেচ সহায়তায় জনপ্রতি ৪০০ টাকা হারে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ও আগাছা দমন বাবদ জনপ্রতি ৪০০ টাকা হারে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা হিসাবে মোট আট লাখ এক হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সরকারিভাবে প্রতি কেজি বীজ ৩৪ টাকা, প্রতি কেজি ইউরিয়া ১৪, প্রতি কেজি ডিএপি ২৩ ও প্রতি কেজি এমওপি ১৩ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, নওগাঁর ১১টি উপজেলায় সরকারি প্রণোদনাপ্রাপ্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের সংখ্যা হচ্ছে আট হাজার ৭৫০ জন। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় উফশী আউশ ৮৬০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ৯০০ জন; রানীনগর উপজেলায় উফশী আউশ ৪০০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ৪৪০ জন; আত্রাই উপজেলায় উফশী আউশ ৩০০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ৩৪০ জন; বদলগাছি উপজেলায় উফশী আউশ ২৩০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ২৭০ জন; মহাদেবপুর উপজেলায় উফশী আউশ এক হাজার ৩০০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট এক হাজার ৩৪০ জন; পত্নীতলা উপজেলায় উফশী আউশ ৯০০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ৯৪০ জন; ধামইরহাট উপজেলায় উফশী আউশ ৭৪০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ৭৮০ জন; সাপাহার উপজেলায় উফশী আউশ ৪৮০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ৫২০ জন; পোরশা উপজেলায় উফশী আউশ ২৮০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট ৩২০ জন; মান্দা উপজেলায় উফশী এক হাজার ৭৫০ জন ও নেরিকা আউশ ৫০ জনসহ মোট এক হাজার ৮০০ জন ও নিয়ামতপুর উপজেলায় উফশী আউশ এক হাজার ৬০ জন ও নেরিকা আউশ ৪০ জনসহ মোট এক হাজার ১০০ জন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সত্যব্রত সাহা বলেন, আউশ ধান চাষ করতে বেশি সেচ দিতে হয় না। এতে পানির সাশ্রয় হয়। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের লাভ বেশি হয়। এ কারণে কৃষকদের আউশ চাষে আগ্রহী করে তুলতে সরকারের এ উদ্যোগ যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী।