ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ‘পাগল’ বলা যাবে না

মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে সরকার একটি নতুন আইন করছে। প্রস্তাবিত এ আইনে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চারটি উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। সংজ্ঞা নির্ধারণ ছাড়াও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও সম্পদ সুরক্ষা বিধান থাকছে নতুন এ আইনে।
‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৬’-নামের এ আইনের খসড়া এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রস্তুত করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য শিগগিরই এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পেশ করা হতে পারে।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির সংজ্ঞা নির্ধারণের পাশাপাশি একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের সংজ্ঞাও নিরূপণ করা হয়েছে প্রস্তাবিত এই আইনে। মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির অধিকার খর্বকারীর জেল-জরিমানার বিধানও থাকছে। এ ছাড়া কোনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তার ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে চিহ্নিত বা আখ্যায়িত করলে তারও প্রতিকার থাকছে এই আইনে।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারণ করে খসড়া আইনের ৩ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, ‘যখন কোনো ব্যক্তি (ক) নিজের সম্ভাবনাসমূহ অনুধাবন করিতে অপারগ; (খ) জিনের স্বাভাবিক চাপসমূহের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া জীবনযাপন করিতে অসমর্থ; (গ) উৎপাদনমুখী এবং ফলদায়ক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখিতে অক্ষম এবং (ঘ) তাঁহার নিজ এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য কোনোভাবে অবদান রাখিতে সক্ষম নন।’ এমন ব্যক্তিরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন।
একই ধারার ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, ‘মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তি বলিতে মানসিক রোগগ্রস্ত ব্যক্তিকে বুঝাইব। তবে শর্ত থাকে যে, এই সব মানসিক অসুস্থতার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে এবং একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অর্থবা দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার কর্তৃক নির্ধারণ ব্যতিরেখে কোনো ব্যক্তিকে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত বলিয়া সাব্যস্থ করা যাইবে না।’
নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে খসড়া আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘যেহেতু নাগরিকগণের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সহজলভ্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণসহ শরীর ও সম্পত্তির অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নিশ্চিতকরণকল্পে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।’
একজন সুস্থ মানুষ চেনার উপায়ও সম্পর্কেও বলা হয়েছে নতুন এই আইনে। আইনের ৩ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে যে, ‘যখন কোনো ব্যক্তি (ক) নিজের সম্ভাবনাসমূহ অনুধাবন করিতে পারেন; (খ) জিনের স্বাভাবিক চাপসমূহের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া জীবন যাপন করিতে পারেন;(গ) উৎপাদনমুখী এবং ফলদায়ক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখিতে পারেন এবং (ঘ) তাঁহার নিজ এলাকার জনগোষ্ঠীর জন্য কোনোভাবে অবদান রাখিতে সক্ষম হন।’
এই ভঙ্গ করলে তার বিচার করার জন্য পৃথকভাবে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আদালত’ গঠন করার বিধানও থাকছে এই আইনে।