সিরাজগঞ্জের ইলিয়ট ব্রিজ রক্ষায় মানববন্ধন
সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ইলিয়ট ব্রিজের (বড়পুল) মূল নকশা পরিবর্তন করে এর পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং অবৈধ দখলমুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সচেতন নাগরিক ফোরাম।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ইলিয়ট ব্রিজের পশ্চিম পাড় পাদদেশে এই মানববন্ধন করা হয়।
এ সময় আসাদ উদ্দিন পবলুর সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সিরাজগঞ্জ জেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রতন, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত হোসেন, জেলা জাসদ নেতা আবু বক্কর ভূঁইয়া, জেলা বাসদের সমন্বয়ক ও নাগরিক কমিটির নেতা কমরেড নব কুমার কর্মকার, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ব্যক্তিস্বার্থের জন্য কেউ রাষ্ট্রের সম্পদ ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু হাজি আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন প্রভাবশালী এই ব্রিজের নকশা ভেদ করে নিজের বাড়ি নির্মাণ করলেও সিরাজগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তাই আগামী সাতদিনের মধ্যে সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ইলিয়ট ব্রিজ (বড়পুল) রক্ষায় পৌর মেয়র পদক্ষেপ না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কালের সাক্ষী ইলিয়ট ব্রিজের সৌন্দর্য ধ্বংসের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
সিরাজগঞ্জ শহরের মধ্যবর্তী স্থানে ১৮৯২ সালে নির্মিত সমতল থেকে কমপক্ষে ২৫ ফুট উঁচু ইলিয়ট ব্রিজ। এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত সিরাজগঞ্জের মানুষের কাছে এটি বড়পুল নামে পরিচিত।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৯২ সালে যখন ব্রিজটি নির্মাণ করা হয় তখন প্রমত্তা যমুনার শাখা নদী ছিল সিরাজগঞ্জ শহরকে দুই ভাগ করা হুড়া সাগর। সিরাজগঞ্জ শহরে প্রথম ও একমাত্র এ ব্রিজটি নির্মাণের পর নদীর দুই পাড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। এর আগে নৌকা ছাড়া পারাপারের কোনো সুযোগ ছিল না। নদী দিয়ে চলাচল করত বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার ও পালতোলা নৌকা। সে সময়ের কোনো এক বিকেলে সিরাজগঞ্জের তৎকালীন ইংরেজ মহুকুমা প্রশাসক বিটসন বেল শহরের পশ্চিম পাড় থেকে পূর্বপাড়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তির আর্তনাদ তাঁকে দারুণভাবে নাড়া দেয়। লোকটির কাছে টাকা নেই, কিন্তু মাঝি বিনা পয়সায় নদী পার করতে নারাজ। ওই ব্যক্তি পুরো দিনের উপার্জন দিয়ে পরিবারের জন্য খাদ্য কেনায় হাতে কোনো টাকা অবশিষ্ট ছিল না।
এখন নদী পার হতে না পারলে অনাহারে থাকবে পরিবারের লোকজন। বেলের অনুরোধে মাঝি লোকটিকে নদী পার করে দেন। এ ঘটনার পরই বেল নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগী হন। গঠন করেন ব্রিজ নির্মাণ কমিটি। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চাঁদা তুলে তহবিল গঠন করেন। তৎকালীন পাবনা জেলা বোর্ড ব্রিজ নির্মাণে ১৫ হাজার টাকা মঞ্জুর করে। পরে ১৮৯২ সালের ৬ আগস্ট বাংলা ও আসামের গভর্নর স্যার চার্লস ইলিয়ট ব্রিজটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মোট ৪৫ হাজার টাকায় নির্মিত হয় ব্রিজটি। এর বৈশিষ্ট্য হলো পুরো ব্রিজটিতে কোনো খুঁটি ব্যবহার করা হয়নি। পরে গভর্নরের নামে নামকরণ করা হয় ইলিয়ট ব্রিজ। সেই সময়ে ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও ১৬ ফুট প্রস্থের এই ব্রিজটি ছিল অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য স্থাপনা। সে সূত্রে ধীরে ধীরে বড়পুল নামে ব্রিজটি পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৭০ এর দশকে খাল হিসেবে হুড়া সাগরের সংস্কার করা হয়। নতুন নাম হয় কাটাখালী। যার অনেকটা এখন প্রভাবশালীদের দখলে।